ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে বালু উত্তোলন, ধলেশ্বরীতে দেখা দিয়েছে ভাঙন

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১১, ১১ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১১:১৫, ১১ নভেম্বর ২০২২
আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে বালু উত্তোলন, ধলেশ্বরীতে দেখা দিয়েছে ভাঙন

ধলেশ্বরী নদী থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে বায়রা খেয়া ঘাট এলাকায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প উন্নয়নের নামে ধলেশ্বরী নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে।ড্রেজার মেশিন (খনন যন্ত্র) দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে চলমান ভাঙনের সঙ্গে আগামী বর্ষায় আরও তীব্র আকারে নদীতে ভাঙন দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে কোটি টাকা ব্যয়ে ধলেশ্বরী নদী খনন করা হলেও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় এর সুফল কতোটা পাওয়া যাবে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রথমদিকে বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলেও সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি থাকায় স্থানীয়রাও প্রভাবশালীদের ভয়ে আর অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না। প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে উত্তোলিত বালু বানিজ্যের চেষ্টা করছেন একটি অসাধু চক্র। সিংগাইর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী, যুবলীগ নেতা মনির মিয়া, আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগ কর্মী মো. সায়েদুর এই বালু উত্তেলনের কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর যে অংশে ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে সেখানকার দু পাড়েই ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। মেশিন থেকে তোলা এই বালু হাজার মিটার দূরে একটি বেডে(চারিদিকে পারযুক্ত মুক্ত যায়গা) গিয়ে পড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে মানহীন ড্রেজিং মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে বৈদ্যুতিক ৫টি পিলার রাস্তার ওপর কাত হয়ে পরে গেছে, বন্ধ রয়েছে সংযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা না দিলেও আগামী বর্ষায় ভাঙন তীব্র হতে পারে৷ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন কখনোই এলাকার সুফল বয়ে আনে না। গত কয়কেদিন আগে বালু ব্যবসায়ীদের বাঁধা দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ভূমি অফিসের নায়েব এসে জানায় সরকারি কাজে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পরে বালু উত্তোলনকারীরা সরকারি কাজে বাঁধা দিলে মামলার হুমকি দেন। তাই কেউ আর কোনো অভিযোগ করেনি। 

এসময় কথা হয় ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. সায়েদুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সরকারি কাজ শুনে এখানে মেশিনপত্র নিয়ে এসেছি। সিংগাইর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী আমাদের নিয়ে এসেছেন। ফিট হিসাবে আমাদের মাটির দাম দেওয়ার কথা। বেডে মাটি ভরা শেষ হলে গাড়ি যোগে এ মাটি ফেলা হবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে।  বেডের জায়গাটি সাবেক নারী ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্য মাকসুদা বেগমের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।’

সিংগাইর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, ‘কোনো তথ্য জানতে হলে অফিসে আসেন।’

বায়রা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ঝিলন খান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর ড্রেজার দূরে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে বালু উত্তোলন করলে ক্ষতি হবেনা এমন জায়গায় ড্রেজার বসাতে বলা হয়েছে।’ 
কিভাবে সেই জায়গা নিরুপন করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লগি (বাঁশ) দিয়ে পরিমাপ করে নিতে বলেছি। আর যেখানে ব্যক্তিগত জায়গা নেই এমন জায়গা নির্বাচন করতে বলেছি।’

ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প বা সরকারি প্রকল্পে কাজ করার জন্য বাজেট থাকে। সে অর্থ দিয়েও মাটি সরবরাহ করা যায়। আর নদী থেকে ম্যাপ অনুযায়ী বালু তোলা হয় না। ফলে একদিকে জনস্বার্থে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। অন্যদিকে নদী থেকে বালু তোলায় জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়।’

 মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘জেলার নদীগুলোতে গত বছর নদী খনন প্রকল্প শেষ হয়েছে। এখন আর নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতে চাইলে অবশ্যই সেক্ষেত্রে সার্ভে করে নেওয়া উচিত। তা না হলে নদী ভাঙনের মুখে পড়বে।’

সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপন দেবনাথ বলেন, ‘নদীর পাড় ভাঙার বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এবিষয়ে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী সরকারি প্রকল্পেও বালু মহালের বাইরে থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়