ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিএনপির সমাবেশের আগে সিলেটেও পরিবহন ধর্মঘট?

নূর আহমদ, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১৫ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১১:৫৮, ১৫ নভেম্বর ২০২২
বিএনপির সমাবেশের আগে সিলেটেও পরিবহন ধর্মঘট?

সিলেট নগরীর আলিয়া মাদরাসা মাঠের চারপাশ বিএনপি নেতাদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে।

আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। দেশের ৪ বিভাগীয় শহর ও একটি জেলা শহরে সমাবেশের আগে পরিবহণ নেতারা ধর্মঘট ডাকলেও সিলেটে এমন পরিস্থিতি না হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটি। এদিকে এখন পর্যন্ত পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট আহবানের কোনো ইঙ্গিত দেননি। 

সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শ্রমিক সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সিলেটের রাজনৈতিক, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের কথা তুলে ধরেছি। বলেছি শ্রমিকরা সর্বদলীয়। যার জন্য ধর্মঘট ডাকার কোনো চিন্তা বা লক্ষ্য আমাদের নেই।’

সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয়। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা তাদের সিলেটের সার্বিক পরিস্থিতি বুঝনোর চেষ্টা করছি।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরীর আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপির সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকা ইতোমধ্যে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। চলছে মঞ্চ নির্মাণের কাজ। সমাবেশের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে পুরো নগরীতে বিরাজ করছে সাজসাজ রব। 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নেতা আফম কামাল হত্যাকাণ্ড ও চলমান এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ২০ নভেম্বরের সমাবেশ একদিন এগিয়ে ১৯ নভেম্বর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিবহণ ধর্মঘট হবে কিনা এ নিয়েও এখনো সংশয় রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। 

সিলেট জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, সিলেটের সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের কথা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি পরিবহণ শ্রমিক-মালিকরাও অবহিত। আশা করা হচ্ছে শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সফলে সহায়তা করবেন। তবুও ধর্মঘট হলেও বিকল্প সব ব্যবস্থা নেওয়া আছে। কোনভাবেই জনতাকে সমাবেশে আসা আটকানো যাবে না।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘পরিবহণ নেতা বা শ্রমিকরা আমাদের ভাই। আমরা মনে করছি, পরিবহন শ্রমিকরা গণসমাবেশের আগে ধর্মঘট দেবেন না। আমরা সমাবেশ আয়োজনে পরিবহন শ্রমিকদের সহযোগিতা চাইছি। কারণ পরিবহণ নেতারা কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলবেন না বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডাকলেও বিএনপির সমাবেশে কোনো প্রভাব পড়বে না। এটি একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। জনগণ স্বস্ফুর্তভাবে দ্রুব্যমূল্য বৃদ্ধি, গুম ও খুনের প্রতিবাদ জানাতে চায়। তাতে শ্রমিকরা কেনো জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা তো তাদের কথাও বলছি। কারণ বাজারে গিয়ে তারাই হাপিতাশ করছে। তাদের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মঘট হলে আমরা বিকল্প সব ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। কোনো গাড়ি না চললেও ১৯ নভেম্বর সিলেটে জনতার ঢল নামবে। কেবল আলীয়া মাদরাসা মাঠ নয়, পুরো সিলেট সেদিন সমাবেশের নগরী হয়ে উঠবে। এ দিন ৪ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে এই সিলেটে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবহণ ধর্মঘট হোক বা না হোক বিএনপি সিলেটের বিভাগের অন্যসব জেলা থেকে আগতদের আবাসন ও খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে রেখেছে। আগের দিনের জন্য নগরীর বেশিরভাগ কমিউনিটি সেন্টারগুলো বুক করে রেখেছে তারা। 

বিএনপি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্তত ২২টি কমিউনিটি সেন্টা বুকিং করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর ফাকা মাঠগুলোতে রাতে অবস্থান করবে গ্রামগঞ্জ থেকে আগত নেতাকমীর্রা। 

বিএনপি সূত্রে আরো জানা গেছে, নেতাকর্মীদের থাকার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি আমেরিকা থেকে গত ১২ নভেম্বর দেশে ফেরেন। দেশে এসেই সমাবেশ বাস্তবায়নে জোড়াল ভূমিকা রাখছেন তিনি।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সমাবেশ সফলে যেখানে যা প্রয়োজন করা হবে। কোনো প্রতিবন্ধকতাই সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না। বিএনপি নেতাকমীর্রা এখন উজ্জিবিত। তাদের সুবিধা- অসুবিধা দেখাও আমাদের দায়িত্ব।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘যেখানেই জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়