ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আছিয়ার স্বপ্ন মালদ্বীপে আগুনে পুড়ে ছাই

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১৫ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:০৯, ১৫ নভেম্বর ২০২২
আছিয়ার স্বপ্ন মালদ্বীপে আগুনে পুড়ে ছাই

মালদ্বীপে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া আছিয়া বেগম।

হঠাৎ করে স্বামী অসুস্থ হয়ে পরায় আছিয়া বেগমের (৫০) পরিবারে নেমে আসে অভাব-অনটন। ওই সময় তার চার ছেলে-মেয়েও ছিল নাবালক। এমতাবস্থায় পরিবারের হাল ধরতে আছিয়া ২০১০ সালে ঋণ করে পাড়ি জমান মালদ্বীপে। তার স্বপ্ন ছিল স্বামীর চিকিৎসা ও পরিবারের স্বচ্ছতা ফেরানোর। কিন্তু সুখের নাগাল ধরার মুহূর্তে এসে তার সব স্বপ্নই পুড়ে গেলো আগুনে।

গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রাতে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে একটি বাড়িতে আগুন লেগে মারা যান আছিয়া। তার সঙ্গে ওই ঘটনায় প্রাণ হারান আরো ১০ শ্রমিক। 

আরো পড়ুন: মালদ্বীপে অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশিসহ ১০ জনের মৃত্যু

মারা যাওয়া আছিয়া টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি একই উপজেলার কুমারগাতা গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপ্রাপ্ত বয়সে দিনমজুর ইসমাইলের সঙ্গে বিয়ে হয় আছিয়ার। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই এই দম্পতির ঘর আলো করে চার সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আছিয়ার স্বামী ইসমাইল হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পরিবারের হাল ধরতে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন আছিয়া। কিন্তু অভাব না যাওয়ায় এক পর্যায়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ করে ২০১০ সালে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি। 

আছিয়া মালদ্বীপে যান গৃহকর্মী হিসেবে। দীর্ঘ এই সময়ে আছিয়া স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সংসারে স্বচ্ছতা ফেরাতে পারেননি। তবে চার ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছেন। দুই ছেলেকে বিয়ে করানোর পর তারা পৃথক হন। বর্তমানে আছিয়ার বড় ছেলে রিকশা চালান ও ছোট ছেলে ইটভাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। ছেলেরা পৃথক হওয়ায় স্বামীর দেখাশোনা করতে আছিয়া তার দুই মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে বাড়িতেই রেখেছেন। 

গত ১০ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে বড় মেয়ে নুর নাহারের মোবাইলে কল আসে মালদ্বীপ থেকে। সেসময় তাকে তার মায়ের মৃত্যুর খবরটি জানানো হয়। তখনই থমকে যান মেয়ে নুর নাহার। কান্নায় ভেঙে পড়েন নুর নাহার। নুর নাহারের কান্নার শব্দে পুরো বাড়িতেই মুহূর্তে নেমে আসে শোকের ছায়া। মুহূর্তেই আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে পুরো এলাকা।    

মৃত আছিয়া বেগমের মেয়ে নুর নাহার বলেন, ‘আমার বাবা অসুস্থ থাকায় পরিবারের হাল ধরতে মা মালদ্বীপে যান। তার স্বপ্ন ছিল বাবার চিকিৎসা ও পরিবারের স্বচ্ছতা ফেরানোর। কিন্তু আমার মায়ের স্বপ্নটা মালদ্বীপের আগুনে পুড়ে গেছে। কখনও ভাবিনি এভাবে মায়ের মৃত্যু হবে। মায়ের স্বপ্নটা আর পূরণ হলো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের লাশটা ফেরত চাই। মায়ের মুখটা শেষবারের মতো দেখতে চাই। হয় তো একদিন পরিবারের স্বচ্ছতা ফিরে আসবে কিন্তু মাকে আর কখনও ফিরে পাবো না।’

আছিয়া বেগমের স্বামী ইসলাইল হোসেন বলেন, ‘সব দোষ আমার। আমার জন্যই সে বিদেশে গিয়েছিল। বিদেশে না গেলে আজ হয়তো এভাবে তার মৃত্যু হতো না। আমার স্ত্রীর লাশটা দেখতে চাই। তার লাশটা নিজ হাতে কবর দিতে চাই।’

আছিয়া বেগমের ছোট ভাই তাজমল হোসেন বলেন, ‘অল্প বয়সে আমার বোনকে বিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর আপা নিজেই দিনজমুরের কাজ করতো। স্বামী অসুস্থ ও ছেলে-মেয়ে ছোট থাকায় আপা নিজেই সংসারের হাল ধরতে মালদ্বীপে যান।’  

স্থানীয় ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মালদ্বীপে নিহত আছিয়ার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তার পরিবার খুবই দরিদ্র। তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ১০ নভেম্বর মালদ্বীপের রাজধানী মালের একটি বাড়িতে আগুন লেগে বাংলাদেশিসহ ১০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মালের মাফান্নু এলাকার ওই বাড়িতে থাকতেন আছিয়াসহ ১০ শ্রমিক। যেখানে আগুন লেগেছিল এটি ঘনবসতি এলাকা হিসেবে পরিচিত।

কাওছার/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়