ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

১০ মামলায় বিএনপির প্রায় ৪০০ নেতাকর্মী আসামি, কারাগারে ৬৩

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ৫ ডিসেম্বর ২০২২  
১০ মামলায় বিএনপির প্রায় ৪০০ নেতাকর্মী আসামি, কারাগারে ৬৩

টাঙ্গাইলে বিভিন্ন থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করছে। দায়েরকৃত ১০টি মামলায় নাম উল্লেখসহ নাম না জানা আসামি করা প্রায় ৪০০ জনকে। এর মধ্যে ৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। 

বিএনপির অভিযোগ, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে হয়রানীর জন্য পুলিশ এসব ‘গায়েবি’ মামলা করেছে। মূলত ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশকে বাঁধাগ্রস্থ করতেই এসব মামলা হয়েছে। 

তবে পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতিসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসাইলে থানার উপ-পরিদর্শক টিটু চৌধুরী বাদী হয়ে ১৬ জনের নামসহ নাম না জানা ৪০/৫০ জনকে আসামি করে গত ২৪ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। ওই গ্রেপ্তার ৩ আসামিকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

২১ নভেম্বর টাঙ্গাইল শহরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা থেকে ফেরার পথে তিন আইনজীবীসহ ১২ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই রাতেই তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় সদর থানায়। পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত একদিন করে ১২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

একই দিন নাগরপুর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২ জনকে এবং ১৭ নভেম্বর কালিহাতী উপজেলার ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে। আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। কালিহাতীর মামলায় ২৯ জনের নামসহ ৩০/৪০জন নাম না জানা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। নাগরপুরের মামলায় ২১ জনের নামসহ ৪০/৫০ জন নাম না জানা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। 

এছাড়া ২২ নভেম্বর ঘাটাইলে পুলিশের উপর ককটেল হামলার অভিযোগে বিএনপির ৩৫ জনের নামসহ ৪০/৫০ জন নাম না জানা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়া ১০ বিএনপি নেতাকর্মীর।

গত ২৩ নভেম্বর মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৬ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ৬ নেতার দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ২৯ নভেস্বর দেলদুয়ারে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পরে গ্রেপ্তারকৃত দুই জনকে এক দিন করে রিমান্ডে পাঠান আদালত।

গত ৩০ নভেম্বর রাতে সখীপুর উপজেলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৮৮ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী। সেদিন রাতেই উপজেলা বিএনপি,  কৃষক দল এবং যুবদলের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

১ ডিসেম্বর গোপালপুরে ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ জনকে এক দিন করে রিমান্ড দেন আদালত।

একই দিন ভূঞাপুরে ১৬ জনের নামে মামলা দিয়েছে পুলিশ। 

এদিকে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়েরের পর বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, যাদের নাম মামলায় রয়েছে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন। অন্যরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। প্রতিটি মামলায় নাম না জানা ব্যক্তিদের আসামী করা হয়েছে। যে কাউকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করার সুযোগ রয়েছে।

সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সাজু জানান, কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেনি। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় নেতাকর্মীরা স্থানীয় একটি ক্লাবে বসে টিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিলেন।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় হোড় শুভ জানান, ওয়ারেন্ট ছাড়াই ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে আটক করে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। নেতাদের খুঁজতে রাতে বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্থ করতেই পুলিশ ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য বাড়ি ঘরে হানা দিচ্ছে। পুলিশের প্রতি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ কোথাও কোনো ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। কাউকে বাড়ি থেকে, কাউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। মামলার কোনো সত্যতা নেই। অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। 

তিনি আরও বলেন, শত বাধা সত্ত্বেও টাঙ্গাইল থেকে বিএনপির ২৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবে। আর এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয়। তাদের কাছ থেকে ককটেলও উদ্ধার করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।

কাওছার/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়