ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভুল চিকিৎসায় প্রকৌশলীর মৃত্যুর অভিযোগ

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ৯ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:১১, ৯ ডিসেম্বর ২০২২
ভুল চিকিৎসায় প্রকৌশলীর মৃত্যুর অভিযোগ

মেয়ের সঙ্গে মারা যাওয়া সিরাজুল ইসলাম।

নাকের পলিপাসের অপারেশনের সময় চিকিৎসকদের ভুলে সিরাজুল ইসলাম (৩০) নামের এক টেক্সটাইল প্রকৌশলীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে মারা যাওয়া প্রকৌশলীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পাবনার পৌর সদরের গোপালপুরের লাহিড়ীপাড়া এলাকার ‘ডিজিটাল হাসপাতালে’ এ ঘটনা ঘটে। 

মারা যাওয়া সিরাজুল ইসলাম পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে। তিনি হা-মীম গ্রুপের হা-মীম স্পিনিং মিলসের প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

মারা যাওয়া প্রকৌশলীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, এক সপ্তাহ আগে সদর থানা সংলগ্ন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদের চেম্বারে চিকিৎসা নেন। সেসময় চিকিৎসক তাকে লাহিড়ীপাড়া এলাকার ডিজিটাল হাসপাতালে অপারেশনের পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শে সিরাজুল ইসলাম তিনদিনের ছুটি নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে পাবনায় আসেন। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদ ও পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক (অ্যানেসথেসিয়া) চিকিৎসক শামসুল হকের তত্ত্বাবধায়নে সিরুজুল ইসলামের নাকের পলিপাসের অপারেশন সম্পন্ন হয়।

পরিবারের অভিযোগ, অপারেশনের পর চিকিৎসকরা চলে যাওয়ার পরপরই রোগীর অবস্থা অবনতি হতে থাকে। এসময় বারবার চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাকাডাকি করলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে স্বজনদের আহাজারিতে ডাক্তার ও হাসপাতালের ম্যানেজার এসে দেখেন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদ, শামসুল হক এবং হাসপাতালের ম্যানেজারসহ কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যান। পরে স্বজনরা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে জানতে চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক শামসুল হক দাবি করে বলেন, ‘আমি যখন তাকে (সিরাজুল ইসলাম) অ্যানেসথেসিয়া করি তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। অপারেশনের পর তার জ্ঞান ফিরেছিল। সেসময় তার সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। পরে তার মৃত্যু কিভাবে হলো এটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে আমাদের কোনো ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়নি।’

এবিষয়ে হাসপাতালের ম্যানেজারকে পাওয়া না গেলেও সহকারী ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম ও ওটি ইনচার্জ সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কিসের জন্য মারা গেল আমরা সেটা বলতে পারছি না। এখন কেন মারা গেল এটা আল্লাহ ছাড়া তো আর কেউ বলতে পারবে না। তবে তার ফিটনেস রিপোর্ট ভাল ছিল।

পাবনা সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে দেখবো। যেহেতু সেখানে রোগী ও হাসপাতাল দু’টি পক্ষ রয়েছে, এখন কেউ যদি লিখিত অভিযোগ না দেয় তাহলে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’ 

ইতোপূর্বে শহরের অনেক হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সব ঘটনাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’

পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখা দরকার কি কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শাহীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়