ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

১৪ ঘরের ৭টি বিক্রি করেছেন উপকারভোগীরা

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ১২ ডিসেম্বর ২০২২  
১৪ ঘরের ৭টি বিক্রি করেছেন উপকারভোগীরা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের অর্ধেক ঘরই বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপকারভোগীদের বিরুদ্ধে। উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘরের মধ্যে ৭টি ঘর ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এদিকে বরাদ্দ প্রাপ্তরা ঘর বিক্রি করে অন্যত্র  চলে যাওয়ায় বর্তমানে ওইসব ঘরে ক্রয় করা ব্যক্তিরা বসবাস করতে শুরু করেছেন।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। একটি ঘর নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পাশাপাশি ঘরের জন্য জমি বরাদ্দ আছে ২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের মোট ২৫১টি ঘর সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে ।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ১০ নম্বর ঘরের মালিক বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী সারা খাতুন দম্পতি। বর্তমানে এই ঘরটি ৮০ হাজার টাকায় ক্রয় করে বসবাস করছেন আনু ও সাবিনা বেগম দম্পতি। ১৪ নম্বর ঘরের মালিক আব্দুস সালাম ও তার স্ত্রী সেলিনা দম্পতি। অথচ এই ঘরটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ১ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন শিরিনা বেগম। ৮ নম্বর
ঘর অবদুর রশিদ দম্পতি বরাদ্দ পেলেও ঘরটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছেন জাহের আলী। ৯ নম্বর ঘর ঠান্ডু দম্পতি পেলেও সে ঘরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনে বসাবাস করতে শুরু করেছেন পিঞ্জিরা খাতুন তার সন্তান। 

১৩ নম্বর ঘর রফিকুল ইসলাম ও মোছা. ফুলমালা দম্পতি পেলেও ১ লাখ টাকায় সেটি ক্রয় করেন নাজমুল হোসেন। ১৬ নম্বর ঘর বিধবা রেশমা খাতুন বরাদ্দ পেলেও ওই ঘর ১ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন হাফিজুল ইসলাম ও নাছিমা খাতুন দম্পতি। ১৭ নম্বর ঘরটি জহুরুল ইসলাম ও আফরোজা বেগম, বরাদ্দ পেলেও সেই ঘর ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় কিনেছেন হালিমা বেগম নামের এক নারী। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা জানান, জনপ্রতি দুই শতক জমি ও প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকার ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আর বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এ ঘর বিক্রি করেছেন মাত্র ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া ঘর বরাদ্দ প্রাপ্তদের তালিকায় ভুল মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। যাতে বরাদ্দ প্রাপ্তদের সঙ্গে পরবর্তীতে যাতে কেউ যোগযোগ করতে না পারে।  

তাদের অভিযোগ ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রনয়ণে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতি করেছেন। ফলে বরাদ্দ প্রাপ্তরা এ ঘর বিক্রি করার সাহস পেয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর যারাই পেয়েছেন তাদের অনেকেরই বাড়ি রয়েছে। যেমন ১০ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী সারা খাতুনের গাড়াদহ ফুটবল খেলার মাঠের পাশে বড় বাড়ি রয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত করলে বেল্লালের মতো আরও অনেকের নাম প্রকাশ পাবে।

সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ঘর ক্রয় করা আনু ও সাবিনা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি-ঘর কিছুই নেই। আমাদের কোনো মানুষ নেই, তাই দৌঁড়া ঝাপ করেও একটা ঘর পায়নি। পরে কিস্তিতে ঋন নিয়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘর কিনে বসবাস
করছি।

১৪ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী আব্দুস সালামের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ‘ঘর বিক্রির বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। ঘর বিক্রির একটি টাকাও আমরা পাইনি। সব ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের (কেজি স্কুল) পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ নিয়েছে। সেই এসব বিষয়ে জানে।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের (কেজি স্কুল) পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ বলেন, ‘একটি ঘর কেনা বেঁচার সময় আমি মধ্যস্ততায় ছিলাম। তবে কোনো টাকার বিষয়ে আমি জানি না।’

শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, ‘ঘর বিক্রির বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘর বিক্রির বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা হবে।’

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ। যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র তারাই ঘরগুলোতে বসবাস করতে পারবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে ঘর বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি। যারা ঘরগুলো বরাদ্দ নিয়ে বিক্রি করেছেন তাদের বরাদ্দ বাতিলের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা ঘরগুলো ক্রয় করেছেন তারা যদি প্রকৃত ভূমিহীন হয়ে থাকে তাদের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।’

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়