ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সাড়ে ৭ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে আজ

নাটোর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৭, ২১ ডিসেম্বর ২০২২  
সাড়ে ৭ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে আজ

নাটোর মুক্ত দিবস আজ ২১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকা হানাদারমুক্ত হলেও নাটোর শত্রুমুক্ত হয় আজকের এই দিনে। 

১৯৭১ সালে নাটোর ছিলো পাকিস্তানি হানাদারদের ২নম্বর সেক্টরের হেডকোয়াটার্স। এখান থেকেই দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালন করতো পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ২১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্ত পুরো নাটোর ছিল তাদের দখলে। নাটোরের তৎকালীন গভর্নর হাউস (উত্তরা গণভবন) ছাড়াও নাটোর আনছার হেডকোয়াটার্স, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ, নাটোর রাজবাড়ী, পিটিআই ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ছিল হানাদার সেনাদের নিরাপদ ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধে নাটোরে বড় ধরনের কোনো লড়াই না হলেও একাধিক স্থানে চালানো হয় গণহত্যা।

মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোর সদর উপজেলার ফুলবাগান, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্টি, শুকোলপট্টি, মলিকহাটি, ফতেঙ্গাপাড়া, ছাতনী, দত্তপাড়া, বড়াইগ্রামের বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ী, সিংড়ার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগারমিল চত্বরে গণহত্যা চালায়।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হানাদারমুক্ত হলেও নাটোরমুক্ত হয় ২১ ডিসেম্বর। তৎকালীন গভর্নর হাউস বর্তমান উত্তরা গণভবনে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে পাকিস্তানি সেনা গ্যারিসনের টু আইসি ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করেন। সে সময় তার নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার, জেসিও এবং মিলিশিয়াসহ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার সেনাও আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এসময় নাটোর সেনা গ্যারিসনের কমান্ডেন্ট মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ ও মিত্র বাহিনীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডেন্ট লে. জেনারেল লছমন সিং।

আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের পর পাকিস্তানি সেনাদের ট্যাংক, কামানসহ প্রায় ১১ হাজার অস্ত্র মিত্র বাহিনীর হস্তগত হয়।

পাকিস্তানি বাহনীর পরাজিত হওয়ার খবর পেয়ে ওই দিন বিকেলে আনন্দে সাধারণ মানুষ জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। 

এদিকে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধে নিহত হতভাগ্যদের গণকবরের মেলেনি কোনো সরকারি স্বীকৃতি। সরকারিভাবে তৈরি করা হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ। এসব শহীদ পরিবার এবং নাটোরের মানুষ অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া সব গণকবর ও শহীদদের স্বীকৃতি এবং সেসব স্থানে স্মৃতিসৌধ নেই সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তারা।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দিবসটি পালনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড জেলা শাখা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যৌথভাবে শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে শহরের মাদরাসা মোড়ে অবস্থিত বিজয় স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পরে ভবানীগঞ্জ মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।

আরিফুল/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়