অভিযান-১০ লঞ্চ ট্র্যাজেডির বছরপূর্ণ
ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম
অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। এখনো ৯ জনের মৃতদেহ শনাক্ত হয়নি। যাদের শনাক্ত হয়েছে তাদের স্বজনরাও পায়নি কোন সহায়তা। পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতার দিন কাটছে স্বজনদের।
এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান ১০ লঞ্চে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় ৪৯ জন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, নিহতদের মধ্যে থেকে ১৯ জনের মৃতদেহ ওই দিনই হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। এছাড়া বরগুনা সদরের পোটকাখালী গণ কবরে দাফন করা হয়েছিল অজ্ঞাত ২৩ জনের মৃতদেহ। স্বজনদের মধ্যে ৪৮ জনের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অজ্ঞাত ১৪ মৃতদেহের পরিচয় মিললেও এখনো পরিচয় মেলেনি ৯ মৃতদেহের।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা এখনও ৩০। তবে, সাত মৃতদেহের কোনো হদিস নেই।
নিখোঁজ রয়েছেন বরগুনা সদরের পরীরখাল এলাকার রাজিয়া সুলতানা ও আট বছরের শিশু নুসরাত। বছর পার হলেও এখনও মা ও বোনের মৃতদেহ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌসী।
নিখোঁজ রাজিয়া সুলতানার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, আমার মা ও ছোট বোন অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। এক বছর হয় মায়ের মুখ দেখি না। এখন তো আর মৃতদেহ পাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। তবে যদি মায়ের কবরটা অন্তত পেতাম অথবা মায়ের মৃতদেহের একটি হাড্ডি যদি পেতাম তাহলেও বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করতাম। ১৪ জনের ডিএনএ ম্যাচ করেছে কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ মায়ের সন্ধান পাইনি। সেই ১৪ জনের মধ্যে আমার মা নেই, বোনও নেই।
একই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে ফজিলা আক্তার পপি। তার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার ছোট টেংরা গ্রামে। সন্ধান মেলেনি তারও। পপির মা আমেনা বেগম বলেন, আমরা কিছু চাই না শুধু আমার মেয়ের কবরটা চাই। জানিনা বেঁচে থাকতে আমাদের এই আশা পূরণ হবে কিনা। আমরা বেঁচে থাকতে আমাদের মেয়ে মারা গেলো, এর থেকে কষ্টের বাবা-মায়ের আর কিছু থাকতে পারে না।
এদিকে যাদের স্বজনদের মৃতদেহ শনাক্ত হয়েছে, সেসব স্বজনরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পায়নি তারা।
মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত মো.মহিব ছিলেন পরিবারের আয়ের একমাত্র ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। মহিব (৩০) বরগুনা সদর উপজেলা ঢলুয়া ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের বাসিন্দা। নিখোঁজের পর থেকে ১৮ মাসের সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা মহিবের স্ত্রী লিপি বেগম (২২)। সরকারি ভাবে সহায়তা মেলেনি তাদের।
লিপি বেগম বলেন, আমরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। এমনও দিন যায় তিন বেলা তো দূরের কথা দুই বেলাও খাবার পাই না। ছোট বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। নিখোঁজের প্রায় এক বছর পর আমার ডিএনের পরীক্ষার মাধ্যমে আমার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করা হয়। আমরা কোন সরকারি সহায়তা পাইনি। যাদের কারণে আমাদের একমাত্র আয়ের লোক হারিয়ে গেছে সেই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ৩০ যাত্রীর মধ্যে ১৪ জন শনাক্ত হয়েছে। ওই পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তার জন্য আমরা নৌ মন্ত্রণালয় আবেদন করেছি। তাদের আর্থিক সহায়তার প্রস্তুত করা হয়েছে। যে কোনো দিন তারা এসে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখকে প্রধান করে ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নাজমুল ইসলাম নাসির ও নৌ আদালতে পৃথকভাবে মামলা করেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান।
/টিপু/
আরো পড়ুন