ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হিমালয় নিকটবর্তী পঞ্চগড়ে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪১, ৫ জানুয়ারি ২০২৩  
হিমালয় নিকটবর্তী পঞ্চগড়ে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। অব্যাহত এই শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হিমালয় নিকটবর্তী এ জেলার জনজীবন। রাতভর বইছে ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস, টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। 

বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ সময় পুরো জেলা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে ।  বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও দুপুরের পর থেকে আবারও বাড়ছে শীত। 

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, গত কয়েকদিন ধরে পঞ্চগড়ে ৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। 

এদিকে, ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে রয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। হাঁড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। অনেকেই ছুটছেন ফুটপাতে গরম কাপড়ের খোঁজে। যানবাহনগুলোকে সকালের দিকেও হেডলাইট জ্বালিয়ে সাবধানে চলাচল করতে হচ্ছে।

শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন এই হাসপাতালে শীতজনিত রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। একই চিত্র জেলার অন্য হাসপাতালগুলোতেও।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার মডেল এলাকার গৃহবধূ নাছিমা বেগম কোলের ৯ মাস বয়সি শিশুকে নিয়ে এসেছেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। দুইদিন ধরে সন্তানের পাতলা পায়খানা হচ্ছে। এ কারণে চিকিৎসক তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন। 

৪ মাস বয়সি নাতনীর নিউমোনিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাতমেড়া এলাকার জরিনা বেগম।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত শীতের কারণে শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তাই গত দুদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। ফলে অন্য সময়ের তুলনায় এখন হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ রোগি বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

শিশুদের বাসি খাবার পরিহার করা, খাবার ঢেকে রাখা এবং রাতে শিশুকে নিয়ে বাহিরে বের না হবার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সদর উপজেলার ঠেকরপাড়া এলাকার দিনমজুর ওমর আলী বলেন, শীতের কারণে সকালে কাজে যেতে কষ্ট হয়। একটু দেরিতে গেলে গৃহস্থ কাজে নিতে চায়না। এজন্য প্রতিদিন কাজেও যাওয়া হয়না।

ভ্যানচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, শীতের কারণে সকালে বের হওয়া যায়না, আবার সন্ধা হলেই ঘরে ঢুকতে হয়। এছাড়া সকালে এবং সন্ধার পরে শহরে লোকজনও কম থাকে। সবমিলিয়ে রোজগার কম হচ্ছে।

ট্রাকচালক আব্দুর রউফ বলেন, শীতের সময় গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। কোনও কোনও দিন কুয়াশা বেশি হয়। এর ফলে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। এতে সময় বেশি লাগে। অনেক সময় কুয়াশার কারণে সকাল বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ বলেন, তেঁতুলিয়ার আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পুরোপুরি আসছে না। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি রয়েছে। এ ছাড়া বাতাস হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে সরাসরি তেঁতুলিয়া দিয়ে পঞ্চগড় প্রবেশ করায় এই জনপদে শীতের তীব্রতা আরও বাড়ছে। আগামী কয়েক দিন এই এলাকায় একই রকম আবহাওয়া থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

আবু নাঈম/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়