ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাজবাড়ীর সড়ক অবৈধ যানবাহনের দখলে, দুর্ঘটনায় এক বছরে নিহত ৬৯ 

শফিকুল ইসলাম শামীম, রাজবাড়ী  সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ৬ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৩:৩৩, ৬ জানুয়ারি ২০২৩
রাজবাড়ীর সড়ক অবৈধ যানবাহনের দখলে, দুর্ঘটনায় এক বছরে নিহত ৬৯ 

নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করেই রাজবাড়ীর মহাসড়কে চলছে নসিমন-করিমন ও অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। শুধু যে চলছে তাই না, রীতিমতো সড়ক দখলে রেখেছে এসব যানবাহন। ফলে প্রতিনিয়ত দৌলতদিয়া-খুলনা এবং রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বরণ করছেন সাধারণ মানুষজন।

প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলায় ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬০টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৯ জন এবং আহত হয়ে জীবনযাপন করছেন ৫৪জন। অথাৎ রাজবাড়ী জেলায় প্রতি মাসে গড়ে ৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে নিহত হয়েছেন প্রতি মাসে প্রায় ৬ জন করে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট থেকে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এবং গোয়ালন্দ মোড় থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে নসিমন-করিমন, অটোরিকশা, থ্রি-হুলারসহ নানা প্রকার যানবাহন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা নিয়ম না মেনে বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছে মোটরসাইকেল। যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মো. আয়জাল শেখ বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনা ঘটলে শুধু নিহতদের তালিকা তৈরি হয়। কিন্ত একটি দুর্ঘটনায় কত পরিবার নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছে সেই হিসেব কে বা কারা রাখে। একটি থ্রি-হুইলার দুর্ঘটনার কারণে আমি পঙ্গুত্ববরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছি। পঙ্গুত্বকে সঙ্গী করে আমাকে সংসার চালাতে হচ্ছে।’  

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আক্কাস মন্ডল বলেন, ‘থ্রি-হুইলার দুর্ঘটনায় আমার একটি পা অকেজো হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে কোনো কাজ করতে পারি না। আমার সংসারে মাসহ ৭জন রয়েছেন। এই পঙ্গুত্বকে বরণ করে আমি কিভাবে আয়-রোজগার করে জীবন যাপন করবো সেটা বুঝে উঠতে পারি না। সরকারের উচিত সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করে জরুরী ব্যবস্থা নেওয়া।’  

বিপ্লব নামের এক বাস চালক বলেন, ‘ছোট গাড়িগুলো নিয়মের তোয়াক্কা করে না। যে কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ শুধু বড় গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্ত সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো ওইসব ছোট গাড়ি। মহাসড়কে অবৈধ গাড়ি না থাকলে সড়ক দুর্ঘটনার সিংহ ভাগ কমে যাবে।’

গোয়ালন্দ রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর কাদের বলেন, ‘ছোট গাড়িগুলো হাইওয়েতে উঠার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। ওরা ডান-বাম বোঝে না। ওরা যে কোনো সময় টার্ন নেয় পেছনে কোনো গাড়ি আছে কিনা তাও খেয়াল করে না। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এতে ছোট গাড়ির চালক ও যাত্রীরা মারা যাচ্ছে।’

রাজবাড়ী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফকীর নুরুজ্জামান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো হলো- প্রশিক্ষিত চালকবিহীন গাড়ি চালক, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালানো, মহাসড়কের দুই পাশে অস্থায়ী দোকান ও হাট-বাজার বসানো এবং নসিমন-করিমন ও থ্রি-হুইলারের মতো যানবাহনের মহাসড়কে যাতায়াত।’ 

তিনি আরোও বলেন, ‘মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধ করতে অবশ্যই অবৈধ যানবাহনগুলো বন্ধ করতে হবে। ফিটনেস বিহীন গাড়ি বন্ধ করতে হবে।  প্রশিক্ষিত চালক দিয়ে গাড়ি চালানো নিশ্চিত করতে। এর ফলে অনেকাংশে সড়ক ‍দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।’ 

হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর অঞ্চলের ফরিদপুরের এসপি মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এখনও আমরা কাজ করছি। আমি বলতে চাই, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়