ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিষখালীর তীর যেন অতিথি পাখির অভয়াশ্রম

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ৭ জানুয়ারি ২০২৩  
বিষখালীর তীর যেন অতিথি পাখির অভয়াশ্রম

ঝালকাঠি সদর উপজেলায় বয়ে গেছে সুগন্ধা, বিশখালী, গাবখান, বাসন্ডা ও ধানসিঁড়ি নদী। নদীগুলোর মিলনস্থলের পশ্চিম দিকে গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন; দক্ষিণে পোনাবালিয়া ইউনিয়ন এবং উত্তর-পূর্ব কোণে ঝালকাঠি পৌর এলাকা।  

শীতকালে অতিথি পাখিরা আশ্রয় নিয়েছে বিশখালী নদীর পশ্চিম পাড়ে গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ভাটারাকান্দা ও পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকূল গ্রামের বিশখালী নদী তীরবর্তী এলাকায়। পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত বিষখালী নদী তীরবর্তী এ সব এলাকা। 

প্রতিবছর শীতে দূর-দূরান্ত থেকে পরিযায়ী পাখিরা আশ্রয়ের খোঁজে আসে আমাদের দেশে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষ পাখি দেখতে ভিড় করে নদী তীরের বিভিন্ন স্থানে। পাখিদের কলকাকলি প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। আবাসিক ও অতিথি পাখি মিলে দেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬০ প্রজাতির পাখি আবাসিক। বাকি ৩০০ প্রজাতি অতিথি পাখি। 

পাখি প্রেমি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামসুল হক মনু বলেন, ‘শীত এলেই জলাশয়, নদীর তীরের নিরাপদস্থান, বিভিন্ন হাওর, বিল ও পুকুরের পাড়ে চোখে পড়ে নানা রঙ-বেরঙের নাম জানা, অজানা পাখির। বেআইনিভাবে শিকার হচ্ছে এসব পাখি। অতিথি পাখি প্রকৃতির বন্ধু, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব ও প্রেরণা। এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। এই পাখিগুলো রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব।’ 

তিনি আরও জানান, অতিথি পাখিদের বিচরণভূমি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলায় পাখিরা হারাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়। আবার ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার এবং মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিষে আক্রান্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখিরা। 

বন্য প্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পরিযায়ী (অতিথি পাখি) পাখি হত্যার দায়ে অপরাধীকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। একইভাবে কোনো ব্যক্তি যদি পরিযায়ী পাখির মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করেন, দখলে রাখেন কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করেন বা পরিবহন করেন, সেই ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার আইন প্রচলিত রয়েছে। অতিথি পাখি নিধন এবং বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ জেনেও আইনের ফাঁকে এক শ্রেণির পেশাদার এবং শিকারি কাজগুলো করে চলেছে।

ঝালকাঠি সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসাম্মাৎ জেবুন্নেছা বলেন, ‘পাখিদের বাসস্থান সংকট, বিষটোপ প্রয়োগ, খাদ্য সংকট, শিকার, পাচারসহ ইত্যাদি কারণে আশঙ্কাজনক হারে শীতে পাখি আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। তবে আমরা সচেতন না হলে আইন প্রয়োগে খুব একটা সফলতা পাওয়া যাবে না। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদেরও সহযোগিতা করতে হবে।’ 

অলোক/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়