ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রথমবার হা-ডু-ডু খেলা দেখলো অনেক শিশু-কিশোর

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৩  
প্রথমবার হা-ডু-ডু খেলা দেখলো অনেক শিশু-কিশোর

ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাপক উদ্দীপনায় আয়োজিত হলো বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু। বিলুপ্তপ্রায় খেলার দর্শক সারিতে লক্ষ্য করা গেছে মানুষের ভিড়।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) বিতরণ করা হয় এই খেলার পুরস্কার বিতরণী। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) প্রত্যন্ত অঞ্চল রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাঘোবপুর মন্ডলপাড়া বাজার মাঠে টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

হা-ডু-ডু দেশের জাতীয় খেলা। তবে সময়ের সঙ্গে বিলুপ্তের পথে এক সময়ের জনপ্রিয় এই খেলাটি। তরুণ প্রজন্মের সিংহভাগ শুধু বইয়ে খেলাটি সম্পর্কে পড়েছে। স্থানীয়দের আয়োজনে মাসব্যাপী খেলা দেখতে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধারা ভিড় করেন। বেশি উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে শিশু, কিশোর ও যুবকদের মধ্যে।

খেলা দেখতে আসা রোমাকান্ত পাল নামে এক যুবক বলেন, ‘শুনেছিলাম এই এলাকায় আগে বেশ হা-ডু-ডু খেলা হতো। কিন্তু কখনো চোখে দেখিনি। আজকে দেখলাম। অনেক ভালো লাগলো। আমি খেলাটি ধরে রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।’ 

কিশোর সাজ্জদ বলেন, ‘বইয়ে পড়েছি হা-ডু-ডু জাতীয় খেলা। কিন্তু খেলাটা ঠিক কী রকম, সেটা বাস্তবে কখনও দেখা হয়নি। জীবনে প্রথম দেখলাম। বইয়ে পড়ে খেলাটা সেভাবে বুঝতে পারা যায় না।’  

ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাজু এসেছিল হা-ডু-ডু খেলা দেখতে। তবে কোমল মনে তার প্রশ্ন, ‘সব জায়গায় ক্রিকেট, ফুটবল খেলা হয়। কিন্তু এত মজার খেলা কেনো হয় না?’ 

রেজিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধু খেলা দেখতে এসে বলেন, ‘এখানে অনেক বছর আগে এই খেলা হতো। খেলাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার চালু হয়েছে, ভালো লাগছে। পরিবারের সবাই খেলা দেখতে এসেছি।’ 

খেলা দেখতে আসা স্থানীয় ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য যে খেলাগুলো আছে, সেগুলোতে মানুষের বেশ আগ্রহ কিন্তু আমাদের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু হলেও এই খেলা তেমন হয় না। খেলা না হওয়ার কারণে নতুন প্রজন্ম এই খেলা সম্পর্কে জানতে পারছে না, আর যারা জানে তারা খেলায় আগ্রহ হাড়িয়ে ফেলছে।’  

খেলার পরে অনুষ্ঠান করে চ্যাম্পিয়ন কামার পুকুর দল ও রানার্সআপ ফুটানি টাউন দলের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। মাসব্যাপী টুনামেন্টের প্রথম ধাপের খেলা হয় ২০২২ সালে ৫ নভেম্বর।

বিজয়ী দলের সদস্য রমজান বলেন, ‘জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু, তাই অন্যান্য খেলার মতো এই খেলার প্রশিক্ষণ, বেশি বেশি করে প্র্যাকটিস ও খেলার আয়োজন করার জন্য স্থানীয়সহ সরকারকে অনুরোধ করছি।’

খেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘খেলাটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমার ও স্থানীয়দের ইচ্ছায় এবং সহযোগিতায় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। মাসব্যাপী এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি খেলায় দর্শকের ভিড় ছিল। এই যে মাঠে এত দর্শক, তারা খেলা দেখে যে আনন্দ পাচ্ছে, এটাই আমাদের স্বার্থকতা।’ স্থানীয় ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খেলাটি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

ফাইনাল খেলার প্রধান অতিথি রাণীশংকৈল উপজেলার চেয়ারম্যান মো. শাহরিয়ার আজম মুন্না বলেন, ‘হা-ডু-ডু খেলাটি আমাদের এলাকা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। দেশের প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারকে এই খেলার আয়োজন করার অনুরোধ করছি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতা চালু রাখার জন্য সহযোগিতা থাকবে।’
 

হিমেল/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়