ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দেবর-ভাবির একাধিক এনআইডি, করছেন সরকারি চাকরি

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ২০:২০, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩
দেবর-ভাবির একাধিক এনআইডি, করছেন সরকারি চাকরি

লাভলী বেগম ও আনোয়ার হাওলাদার

একই ব্যক্তি, একাধিক এনআইডি! সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স না থাকায় অনিয়ম করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত দুজন— মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর গ্রামের মাইনদ্দিন হাওলাদারের স্ত্রী লাভলী বেগম ও তার দেবর আনোয়ার হাওলাদার। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে দেবর-ভাবির সরকারি চাকরির বিষয়টিতে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লাভলী বেগমের প্রথম এনআইডি কার্ডে (নং- ৫৫৬৬০৯৫০৭, পিন- ১৯৭০৫৪১৮০৫৭৩৮০৭০১, ফরম নং- ৩৮০৭০১, ভোটার নম্বর- ৫৪০৬১২৩৮০৭০১) জন্ম তারিখ ১ মে, ১৯৭০। দ্বিতীয় ভোটার আইডি কার্ডে (নং- ২৮১৩২৬৬৮৭৭, পিন- ১৯৮৪৫৪১৮০৫৭০০০০৩২, ফরম নং- ২০৫৭৭০৮৭, ভোটার নম্বর-৫৪০৬১২০০০২০৪) জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৪। 

লাভলী বেগমের জন্ম ১৯৭০-এ হওয়ায় ২০১৩ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা ছিল না। ফলে প্রথম ভোটার আইডির কথা গোপন রেখে বয়স কমিয়ে পুনরায় ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ দিয়ে এনআইডি তৈরি করেন। এরপর, ২০১৩ সাল থেকে কবিরাজপুর সরকারি হাসপাতালের আয়া হিসেবে চাকরি করছেন।

অপরদিকে, লাভলীর দেবর আনোয়ার হাওলাদারও ভাবির মত বয়স গোপন করে ভোটার আইডি বানিয়ে কবিরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করছেন। 

আনোয়ার হাওলাদারের প্রথম এনআইডি কার্ডের (নং- ৫৯৭৬৮০৩৯৩২, পিন- ১৯৭২৫৪১৮০৫৭৩৮০৬২৪, ফরম নং- ৩৮০৬২৪, ভোটার নম্বর- ৫৪০৬১২৩৮০৬২৪) জন্ম তারিখ ৪ মে, ১৯৭২। দ্বিতীয় এনআইডি কার্ডে (নং- ৩৭২৭১৬৯৫৮৭, পিন- ১৯৮৩৫৪১৮০৫৭০০০০২৩, ফরম নং- ২৭৫৮৬৩৩৮, ভোটার নম্বর- ৫৪০৬১২০০০২৪২) জন্ম তারিখ ১ জুলাই, ১৯৮৩।

তাদের দুটি পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ হিসাব করে দেখা যায়, ১৯৭০ সালে লাভলীর জন্ম হলে নির্ধারিত বয়সসীমা ৩০ অতিক্রমের ১৩ বছর পর ২০১৩-তে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন। আর দেবর আনোয়ারের জন্ম তারিখ ১৯৭২ সালে হলে ৩০ অতিক্রমের ১২ বছর পর ২০১৩-তে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। 

নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ ইস্যুকৃত (দ্বিতীয়) ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে, লাভলী বেগমের জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪। তার ছেলে আল-আমিনের আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ ৩ জানুয়ারি, ১৯৯১। সে হিসাবে মাতা-পুত্রের জন্মের ব্যবধান ৭ বছর। 

এ ব্যাপারে কবিরাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবুল বাসার রাইজিংবিডি-কে বলেন, ‘প্রথমে আমার কাছে বিষয়টি বিশ্বাস হয়নি। পরবর্তীতে লাভলী বেগম, তার ছেলে ও আনোয়ার হাওলাদারের ভোটার আইডি দেখে রীতিমত অবাক হয়েছি। এমন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তারা সরকারি চাকরি নিয়েছে, এটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার বলে মনে করি।’

যোগাযোগ করলে ‘অসুস্থ’ জানিয়ে লাভলী বেগম কথা বলতে রাজি হননি। তবে, তার স্বামী মাইনদ্দীন হাওলাদার এবং আরেক অভিযুক্ত আনোয়ার জানান, ভোটার আইডি কার্ড হালনাগাদ করার সময় আগেরটি হারিয়ে যাওয়ায় নম্বর পাওয়া যায়নি। এজন্য দ্বিতীয় বার এনআইডি কার্ড বানিয়ে সরকারি চাকরি নিয়েছেন তারা। 

লাভলী বেগমের কর্মস্থল কবিরাজপুর সরকারি হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ মণ্ডল বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে সরকারি বিধান লঙ্ঘন করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমেদ খান বলেন, সরকারি চাকরিতে জালিয়াতি করলে প্রমাণ পেলে চাকরি থাকবে না। 

আনোয়ার হাওলাদারের কর্মস্থল কবিরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোমিনুর রহমান (মিজান) বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে শুনলাম। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

দ্বৈত এনআইডি কার্ড বহন, ব্যবহার করা ও সরকারি চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন আল-মামুন বলেন, বয়স কমিয়ে আইডি বানালে পরবর্তী কার্ড বাতিল হবে। এ ছাড়া, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না।

তথ্য গোপন ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, কারও দুটি ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকবে না। একটি-ই থাকবে। যদি কোনও সরকারি কর্মকর্তার দুটি আইডি কার্ড থাকে, তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়