ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে সরিষা বিপ্লব 

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১০:৫২, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
লক্ষ্মীপুরে সরিষা বিপ্লব 

লক্ষ্মীপুরে সরিষার মাঠ হলুদ ফুলে ভরে গেছে। দিগন্তজোড়া হলুদ সরিষার মাঠ চোখ জুড়াচ্ছে সবার। সয়াল্যান্ড হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুরের মাটিতে এবার সরিষা চাষের বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। 

জেলার অধিকাংশ কৃষক এবার সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। এছাড়া কৃষি বিভাগ থেকেও সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহী করে তোলা হচ্ছে। ফলে ফুলে ফুলে শোভা পাচ্ছে সরিষার মাঠ। 

লক্ষ্মীপুর কৃষি বিভাগ জানায়, সরিষা চাষিদের সর্বাত্মক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকারি প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে চাষীদের। 

চাষিরা জানান, সরিষা চাষে কৃষি বিভাগ থেকে বীজ এবং সার পাচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে এই ফসল চাষে খরচ এবং শ্রম কম লাগায় সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে, গত মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৯৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবার সরিষার আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ। সবচেয়ে বেশি সরিষাদ আবাদ হয়েছে রায়পুরে। এ উপজেলার চাষিরা ৭৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করেছেন। এছাড়া সদর উপজেলার ৩৫০ হেক্টর, কমলনগরের ১৮০ হেক্টর, রামগঞ্জে ১০০ হেক্টর, রামগতিতে ৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। জেলাতে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। 

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষার আবাদ বাড়াতে কৃষকদের সরকারিভাবে প্রনোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার ৪ হাজার ৮০০ কৃষককে এক কেজি করে সরিষা বীজ, ড্যাপ সার ১০ কেজি ও এমওপি সার ১০ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাও ১০০ কৃষককে এক কেজি করে সরিষার বীজ দিয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়ন ও চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক কবির, সিরাজ মোল্লা, মোস্তফা কাজী, সফিক উল্যাসহ কয়েকজন জানান, সরিষা লাভজনক ফসল। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ক্ষেত থেকে ফলন পাওয়া যায়। আমন ধান কাটার পরপরই কৃষকরা সরিষার বীজ জমিতে রোপণ করেছেন। সরিষা উঠে গেলে ওই জমিতে সয়াবিন বা ডাল জাতীয় শষ্য আবাদ করতে পারবেন। তাই এ সময়টাতে অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষাবাদকে তারা ভালো মনে করছেন। চাষাবাদে তারা বীজ এবং সার সরকারিভাবে পেয়েছেন।

কৃষক নুরুল আলম বলেন, ‘৩৩ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকার মতো। গাছে গাছে ফুলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ অঞ্চলে এবার সরিষার ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে।’

মো. সোহেল হোসেন নামে অপর এক সরিষা চাষি বলেন, ‘আমি ১ একর ৬০ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার টাকা। এবার চাষাবাদ ভালো হয়েছে। ফলনও আশা করছি ভালো পাবো।’ 

জেহাদ হোসেন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে সরিষার চাষ হয়েছে। ক্ষেতগুলো ফুলে ফুলে ভরে গেছে। সবুজ মাঠ হলুদে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সরিষার মাঠ। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সরিষা ক্ষেত দেখতে আসছেন এবং ক্ষেতের ছবি তুলে নিচ্ছেন।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘জেলায় এবার অন্যান্য মৌসুমে চেয়ে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের পরামর্শ এবং সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, এ মৌসুমে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলার ১০০ কৃষকের মধ্যে বীজ সরবরাহ করেছি। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়