ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৬ বছর পর উদ্ধার কঙ্কালের সূত্র ধরে মিললো যুবকের পরিচয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩  
৬ বছর পর উদ্ধার কঙ্কালের সূত্র ধরে মিললো যুবকের পরিচয়

মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছিলো কঙ্কাল ভর্তি ড্রাম। সেই কঙ্কালের সূত্র ধরে শনাক্ত হলো হত্যার শিকার হতভাগ্য যুবকের পরিচয়। জানা গেলো, ৬ বছর আগে খুন হন তিনি।

যশোরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার নিরিবিলি এলাকায় মাটির নীচ থেকে উদ্ধার হওয়া সেই ড্রাম ভর্তি কঙ্কালটির পরিচয় শনাক্ত করেছে পিবিআই। কঙ্কালটি খুলনার রাজীব হাসন কাজীর। তিনি খুলনার দিঘলিয়ার ফারুক হোসেনের ছেলে।

ডিএনএ থেকে শনাক্ত করা হয়েছে কঙ্কালটি। খুনের সাথে জড়িত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন-নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলহাটা গ্রামের নূর মিয়ার ছেলে ও যশোরের কিসমত নওয়াপাড়ার আবদার ড্রাইভারের বাড়ির ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ সালাম (৫৫), পুরাতন কসবার ইব্রাহিম (৩২) ও জয়নাল হাওলাদার (৩০)। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সজিবুর রহমান (৩৪) শিক্ষার্থী রিয়াদ হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

বুধবার দুপুরে যশোর পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) যশোর কার্যালয়ে আয়াজিত সংবাদ সম্মলনে পুলিশ সুপার রশমা শারমিন এসব তথ‌্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে এই মামলার দীর্ঘ ঘটনা প্রবাহ উল্লেখ করে রেশমা শারমিন জানান, গত বছরের ৩০ মে যশোর শহরের পুরাতন কসবা নিরিবিলি এলাকার বজলুর রহমান তার জমিতে বাউন্ডারি ঘেরা জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য খননকাজ শুরু করেন। এ সময় পরিত্যক্ত পুরাতন টয়লেটের রিং স্লাবের কুয়ার ভিতর একটি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় পিবিআই যশোর জেলা ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে তারা ২০১৬ সালে পুরাতন কসবা থেকে নিখোঁজ রাজীব হোসেন কাজী নামে এক যুবকের সন্ধান পান। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দোলি মহল গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে রাজীব যশোরে তার চাচা হাসমতের বাসায় থাকতেন। কাজ করতেন পুরাতন কসবা আবু তালেব সড়কের শেখ সজিবুর রহমানের বাসা ও অফিসে।

২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাতে রাজিব তার পিতাকে ফোন করে তাদের খুলনার বাড়িতে আসছে বলে জানায়। কিন্তু রাজীব খুলনায় তাদের বাড়িতে যায়নি। রাজীব বাড়িতে না গেলে তার পিতা রাজীবের মোবাইল ফোনে কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পান।

এদিকে, গত বছর ৩০ মে রাতে রাজীবের চাচা হাসমত তার ভাই ফারুক হোসেনকে জানায়, পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়ার বজলুর রহমানের ঘেরা জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য খোড়ার সময় ড্রামের মধ্যে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া গেছে। আরও জানায়, রাজীব যেখানে কাজ করত সেখানের টয়লেটের রিং স্লাবের ভিতরে ড্রামটি মাটি চাপা দেওয়া ছিল। অর্থাৎ শেখ সজীবুর রহমানের যেখানে অফিস ছিল সেখান থেকেই মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। রাজীব নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর সজীব তার অফিস ভেঙে ফেলেছিল। ফারুক হোসেন তার ভাই হাসমতের এই কথা শুনে যশোরে আসেন।

পিবিআইয়ের ছায়া তদন্তকালীন সময়ে ফারুক হোসেন পিবিআই যশোর অফিসে এসে পুলিশ সুপারকে তার ছেলেকে সনাক্তকরণের জন্য অনুরোধ করেন এবং এই সংক্রান্ত  পিবিআই যশোর কার্যালয়ে ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর একটি জিডি করা হয়। ওই জিডির সূত্র ধরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই যশোর জেলার এস আই জিয়াউর রহমান আদালতের নির্দেশ গ্রহণ করে ফারুক হোসেন এবং তার স্ত্রী মাবিয়া বেগমের নমুনা নিয়ে কঙ্কালের সঙ্গে তাদের পরিচয় সনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে প্রেরণ করেন।

ডিএনএ পরীক্ষায় ড্রামের মধ্যে পাওয়া মানবদেহের কঙ্কালের সঙ্গে ফারুক হোসেন ও তার স্ত্রী মাবিয়ার ডিএনএ এর মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ ড্রামের ভেতরে পাওয়া কঙ্কাল বাদীর ছেলের তা ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়। এরপর রাজীবের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার পিতা ফারুক হোসেন মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালর ৩০ মে যশোরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকায় একটি ভবন নির্মাণের সময় মাটি খুঁড়তে বের হয়ে আসে রাজিবের মরদহ ভর্তি ড্রামটি।

/রিটন/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়