ঢাকা     সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২২ ১৪৩১

বিএনপি-আওয়ামী সংঘর্ষ: স্বেচ্ছাসেবক নেতার মরদেহ হস্তান্তর, গ্রেপ্তার ২

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:৪৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বিএনপি-আওয়ামী সংঘর্ষ: স্বেচ্ছাসেবক নেতার মরদেহ হস্তান্তর, গ্রেপ্তার ২

সংঘর্ষের প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল

গোপালগঞ্জে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল এবং আওয়ামী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদারের মরদেহ নিজ বাড়ি ঢাকার জুরাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ নিহতের স্ত্রী রাবেয়া রহমান ও শ্বশুর হাবিবুর রহমানের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়। 

এদিকে, গোপালগঞ্জে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল এবং আওয়ামী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে বিক্ষাভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা শহরের বেদগ্রাম মোড়ে পথসভা শেষ করে গাড়ি বহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ কর্মীরা। এ সময় তাদের গাড়ি বহর সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের ব্যানার ফেস্টুন ছেড়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সমর্থকদের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্নাসহ ৩৫ জন আহত হন।

এ হামলার ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, এ ঘটনার আওয়ামী লীগ জড়িত নয়।

আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে স্বজনেরা অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে ঢাকার জুরাইনের উদ্দেশে গোপালগঞ্জ থেকে রওনা হন। জুরাইন কবরস্থানে তার মরদেহ সমাধিস্থ করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। 

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার বিকালে বৃষ্টি উপক্ষো করে জেলা শহরের লঞ্চঘাট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় স্বর্ণ পট্টিতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান, সদস্য ডা, কে এম বাবার, এ্যাড তৌফিকুল ইসলাম তৌফিকসহ দলীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। এ কর্মসূচীতে জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।

অপরদিকে, গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা শওকত আলী দিদারের নিহতের ঘটনায় আলিমুজ্জামান চৌধুরী (৫০)ও সিজার শেখ (৪২) নামে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বিকেলে ওই দুই জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বাড়ি সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায়। 

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. আনিচুর রহমান জানান, আলিমুজ্জামান চৌধুরী ও সিজার শেখকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সন্দেহে আটক করা হয়। কিন্তু ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা না হওয়ায় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।  

নিহতের স্ত্রী রাবেয়া রহমান বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর মরদেহ বুঝে নিয়েছি। ঢাকার জুরাইনে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে। আমরা স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই। পারিবারিক ও দলীয় সিদ্ধান্ত শেষে মামলা করা হবে।’ 

নিহতের শ্বশুর হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা জামাতা গোপালগঞ্জে বেড়াতে এসেছিল। তাকে এভাবে হত্যা করা হবে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।’ 

গোপালগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরা বলেন, ‘আমি এ গাড়ি বহরে ছিলাম। গাড়ি বহরটি ঘোনাপাড়া আসলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত ও অনেকে আহত হন। পূর্বপরিকল্পিত হবে আওয়ামী লীগ এ হামলা চালিয়েছে।’ 

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক বলেন, ‘এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পথসভা শেষ করে টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরিকল্পনা করে এ হামলা চালিয়েছে। আমরা এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচারের দাবি জানাই।’ 

জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখনও মামলা করা হয়নি। কারণ তিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী। দলীয় সিদ্ধান্তের পর মামলা করা হবে।

তবে এ হামলার কথা অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক বলেন, ‘গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, এটার সঙ্গে আওয়ামী লীগ কোনোভাবে জড়িত নয়। বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটির এক পয্যায়ে এ সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগসহ কোনো সংগঠনের নেতাকর্মী জড়িত নয়। বিএনপির বহিরাগতরা কর্মীরা ঘোনাপাড়ায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ব্যানার ছিড়ে ফেলতে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাধা দেয়। আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
 

বাদল/বকুল 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়