দায়িত্ব নিয়েই দুই শহিদের বাড়িতে ডিসি
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
নিহত সাকিব আনজুমের স্ত্রী নিশাত তাবাসসুম সঙ্গে রাজশাহীর নতুন ডিসি আফিয়া আখতার
দায়িত্ব নিয়েই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই শহিদের বাড়িতে গেছেন রাজশাহীর নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফিয়া আখতার। তিনি পরিবার দুটির খোঁজখবর নেন এবং যে কোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
রোববার (৩ নভেম্বর) আফিয়া আখতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট নিহত বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার ইপিজেডের বেঙ্গল কোম্পানির সিনিয়র অপারেটর মিনারুল ইসলামের বাড়ি যান। এর আগে তিনি আজ দুপুরে কর্মস্থলে যোগ দেন।
রাজশাহী নগরের রানীনগর এলাকায় সাকিবের বাড়িতে ডিসির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারও উপস্থিত ছিলেন।
নগরের গোলজারবাগ এলাকায় মিনারুল ইসলামের বাড়িতে ডিসির সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মহিনুল হাসান।
ডিসি আফিয়া আখতার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত-নিহতরা দেশের সম্পদ ও গর্ব, তারা শহিদের মর্যাদা পাবেন। তাদের রক্তের বিনিময়েই নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সার্বিক প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে আছে। সবসময় যে কোনো প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন শহিদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পরই আমি শহিদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কাজকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ভবিষ্যতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই জেলার ছাত্র আন্দোলনে আহত-নিহতদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আজকে নবাগত জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম কাজ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা এ রকম জেলা প্রশাসক রাজশাহীর জন্য আশা করেছিলাম।’
নিহত সাকিব আনজুমের স্ত্রী নিশাত তাবাসসুম বলেন, ‘এতো অল্প বয়সে স্বামীকে হারাবো তা কখনো কল্পনাও করিনি। তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তার না থাকা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। আজকে জেলা প্রশাসক আমাদের খোঁজখবর নিতে এসেছেন, সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
আন্দোলনে নিহত মিনারুল ইসলামের মা ডলি খাতুন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মিনারুল ছিল সবার ছোট। ইউসেফ স্কুল থেকে চাকরি পেয়ে ১২ বছর ঢাকার নারায়ণগঞ্জ এলাকার ইপিজেডের বেঙ্গল কোম্পানির সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করছিল। আমার কলিজার টুকরা মিনারুল গত ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। আমার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। তার প্রাণের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ তা যেন হারিয়ে না যায়।’
কেয়া/মাসুদ