ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বরগুনার ৭১ ভাগ মানুষের রান্না-গৃহস্থলীতে খালের পানি ব্যবহার

ইমরান হোসেন, বরগুনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ৮ মে ২০২১  
বরগুনার ৭১ ভাগ মানুষের রান্না-গৃহস্থলীতে খালের পানি ব্যবহার

বরগুনা জেলার ৭১ ভাগ মানুষ রান্না ও বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে সরাসরি খালের পানি ব্যবহার করছে। এতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

বরগুনা জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা নাজমুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানান।

এদিকে, সম্প্রতি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, জেলার মাত্র ২০ ভাগ মানুষের বাড়িতে বা বাড়ির কাছে বিশুদ্ধ পানির নলকূপ রয়েছে।

গত মার্চ মাস থেকে বরগুনায় প্রতিদিন শত শত মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানে নামে আইইডিসিআরের ছয় সদস্যের দল। সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরগুনার খালের পানিতে মাত্রারিক্ত কলেরার জীবাণু রয়েছে। আর ডায়রিায় আক্রান্তদের ৭১ শতাংশই খালের পানি ব্যবহার করেছেন। 

শুক্রবার (৭ মে) দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলার  লাকুরতলা খালে সরেজমিন দেখা যায়, খালের দুইপাড়ে অসংখ্য মানুষ গোসল করছে। অনেকে পাতিল থেকে শুরু করে গ্লাস ও প্লেট ধুয়ে নিচ্ছে খাল থেকে। আবার অনেককে খাল থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়। বহুতল ভবনে খাল থেকে মেশিন দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। 

লাকুরতলা এলাকার বাসিন্দা মহাসিন মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে আরও তিন মাস আগে। নলকূপে পানি উঠছে কম। তাই বাধ্য হয়ে খালে গোসল করতে এসেছেন। 

একই এলাকার গৃহবধূ সেতু রাণী রাইজিংবিডিকে বলেন, পুকুরের পানির উপরেই তাদের এখন ভরসা। সেই পুকুরেও অল্প পানি আছে। সেই পানিতে গোসল করলে রান্না করতে পারবেন না। তাই বাধ্য হয়ে খালের পানিতে গোসল করতে হয়।

একই এলাকার গৃহবধূ বনানী চন্দ্র দাস রাইজিংবিডিকে বলেন, তাদের নলকূপ নেই। প্রতিবেশীর নলকূপ থেকে খাবার পানিটুকু সংগ্রহ করেন। তাতে নানান কথা শুনতে হয়। খালের পানিতে কলেরার জীবাণু আছে তারা জানেন। তবে বাধ্য হয়ে সেই পানি দিয়ে থালা-বাসন ধোঁয়া থেকে শুরু করে রান্না করতে হয়।  

লাকুরতলা এলাকার বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনে মোটরের মাধ্যমে খাল থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বৃষ্টির অভাবে পুকুরে পানি নেই। এখন গোসল ও রান্নায়ও যদি নলকূপের পানি ব্যবহার করেন, তবে নলকূপ থেকেও পানি উঠা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই সব জেনে খালের পানি ব্যবহার করছেন।  

একই অবস্থা ভুতমারা খাল, ধূপতি খাল, খবির মিয়ার খালসহ জেলার সব কটি খালের পাড়ের বাসিন্দাদের। একই চিত্র দেখা যায়, খাকদোন নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের। সকাল থেকে নদীর পানি ব্যবহার করতে দেখা যায় অনেককে। 

জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, আইইডিসিআরের পরামর্শ অনুযায়ী শুধু নলকূপের পানি ব্যবহারের নির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। জীবাণুমুক্ত পানি ব্যবহার ও পানের বিকল্প নেই।

সিভিল সার্জন জানান, জেলার হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন ১০০-১২০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। অনেকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের বরিশাল বা ঢাকায় রেফার্ড করতে হচ্ছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। নয়তো আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা নাজমুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ চলছে। পাশাপাশি নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। কিছুটা সময় লাগবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সিভিল সার্জনের নির্দেশনা মানতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, খালের পানি ব্যবহার বন্ধে প্রতিদিন মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। নলকূপের বরাদ্দ আনার ব্যাপারেও কাজ করছে জেলা প্রশাসন। 

/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়