ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যমজ শিশুকে এসপি অফিসে ফেলে গেলেন মা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  
যমজ শিশুকে এসপি অফিসে ফেলে গেলেন মা

ঝালকাঠিতে আরাফ ও আয়ান নামের ১৬ মাসের দুই যমজ ছেলে সন্তানকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেলেন এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রী। স্বামী ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন না করায় রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শিশু দুটিকে রেখে চলে যান মা সুমাইয়া আক্তার।

থানা পুলিশ ও  শিশুদের মা কাছ থেকে জানা যায়, শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন কাঁঠালিয়া থানায় পুলিশ কনস্টেবল। বর্তমানে তিনি এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন। তাঁর বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে।  

২০১৯ সালের মে মাসে ঝালকাঠি সদরের খাওক্ষির গ্রামের সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় কনস্টেবল ইমরানের। দাম্পত্য কলহের জেরে এ বছরের মার্চ মাসে স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠান ইমরান। তালাক নোটিশ পেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করেন সুমাইয়া।  

শিশু দুটির মা সুমাইয়ার দাবি তালাক নোটিশ পাঠানোর আরো আগে থেকে তাঁর এবং সন্তানদের কোন ভরণপোষণ দিচ্ছেনা ইমরান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানী মাহফূজ মিয়া বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এক নারী তাঁর দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে এসপি অফিসের চেক পোষ্টের সামনে আসেন। এ সময় সেখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে ছেলে দুটিকে রেখে ওই নারী চলে যান।  যাবার সময় সে বলে যায়,  তোমাদের সন্তান তোমাদের কাছেই থাক।  

সন্ধ্যায় ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে দেখা যায় , শিশু দুটির কান্নায় থানার পারিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের এক নারী কনস্টেবল শিশু দুটিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সময় শিশু দুটির শরীরের তাপমত্রা ছিল অনেক বেশি।

সুমাইয়া আক্তার মুঠোফোনে জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু আরাফ ও আয়ান ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিল। রোববার সকালে চিকিৎসকরা শিশু দুটির বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলেন। এতে প্রায় ৬ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি তিনি তার স্বামী কনস্টেবল ইমরানকে জানান। কিন্তু ইমরান টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন।

তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতে জন্য যাই।  কিন্তু প্রধান ফটকের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমরান মিয়া ও  মো. সুমন নামে দুই পুলিশ সদস্য তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে এসেছি। ওদের লালন পালন করতে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু খরচ চালানোর মত সংগতি আমার নেই ।

এ বিষয়ে জানতে ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইলে বলেন, ‘প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য তিন হাজার টাকা সুমাইয়ার ব্যাংক হিসেবে পাঠাই। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাঁদের খোঁজ খবর নেই। কিন্তু মা হয়ে সে কিভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেল?’

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্ম্কর্তা্ (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। শিশুদের দাদা দাদীকে খবর দেয়া হয়েছে।  তাঁরা আসলে শিশু দুটিকে তাঁদের হাতে তুলে দেয়া হবে।’

অলোক/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়