ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

৭ বছর পর মায়ের বুকে পাচার হওয়া কিশোরী 

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ১৭ মে ২০২২  
৭ বছর পর মায়ের বুকে পাচার হওয়া কিশোরী 

আইনজীবী, মা ফাতেমা, জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের প্রতিনিধির সঙ্গে চম্পা (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)

২০১৫ সালে চম্পা আক্তার রহিমাকে যখন অপহরণ করে ভারতে পাচার করা হয়, তখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। এখন তার বয়স ২১ বছর। অনৈতিক কাজে বাধ্য হয়ে ভারতের একাধিক রাজ্যে ঘুরে ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় এবং একটি মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় অপহরণের সাত বছর পর চম্পা ফিরে এসেছে তার মায়ের কোলে। 

ঝালকাঠি মানবপাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে সোমবার (১৬ মে) হাজির করা হয় চম্পা আক্তার রহিমাকে। বিচারক এম এ হামিদ পাবলিক প্রসিকিউটরের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভিকটিম চম্পাকে তার মা ফাতেমা বেগম কমলীর জিম্মায় প্রদানের আদেশ দেন। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠির বাসন্ডা গ্রামের স্বপন হাওলাদার ও ফাতেমা বেগম কমলীর মেয়ে চম্পা আক্তার রহিমাকে (১৪) একই এলাকার হাছিনা বেগম, ঝুমুর আক্তার, মিনতি সিকদার ও যশোরের নাছরিন বেগম ২০১৫ সালের ৫ জুন অপহরণ করে একটি মাইক্রো বাসে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে চম্পাকে কলকাতায় পাচার করা হয়। সেখান থেকে চম্পাকে ব্যাঙ্গালুর শহরের একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। 

বাংলাদেশ ও ভারতের মানবপাচার প্রতিরোধে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার ২০১৫ সালের নভেম্বরে পতিতালয় থেকে ভারতীয় পুলিশের সহায়তায় চম্পাকে উদ্ধার করে ব্যাঙ্গালুর শহরের সেইভ হোম স্বাকশাতারা শেল্টার হোমে রাখে। 
 
এ বিষয়ে ব্যাঙ্গালুরের কৃষনাগিরি জেলার হুডকো থানায় মামলা দায়ের হয়। ভারতে বিচার সম্পন্ন হওয়ার পরে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার সংগঠনের মাধ্যমে চম্পাকে দেশে আনা হয়। গত ৫ মে স্থলবন্দর বেনাপোলে ভারতীয় এই সেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের বাংলাদেশ শাখার কাছে চম্পাকে হস্তান্তর করেন। 

জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের কর্মকর্তা এবিএম মাহিদ হোসেন জানান, চম্পাকে প্রায় ৪-৫ মাস ভারতের পতিতালয়ে দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হয়েছে। তাকে উদ্ধারের পর দীর্ঘদিন ব্যাঙ্গালুরে থাকায় সে বাংলা ভাষা প্রায় ভুলে গেছে এবং ইংরেজি-তামিল ভাষায় কথা বলছে। 

চম্পার মা ফাতেমা বেগম কমলী বলেন, আমার মেয়ে সাত বছর নিখোঁজ ছিল। এই সাত বছরে অনেক চোখের পানি ফেলেছি। আজ ওকে পেয়ে আমি খুব খুশি। 

আর চম্পা ওরফে রহিমা বলেন, যারা আমাকে অপহরণ করেছিল তাদের মধ্যে দুজন আমার পূর্ব পরিচিত ছিল। ওরা আমাকে প্রথমে খুলনা নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে অচেতন করে কৌশলে ভারতে পাঠানো হয়। ভারতীয় পুলিশ উদ্ধার করার পর গত প্রায় সাত বছর আমি ব্যাঙ্গালুরের একটি সেইভ হোমের হোস্টেলে থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। 

ঝালকাঠির অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আ.স.ম মোস্তাফিজুর রহমান মনু বলেন, চম্পাকে অপহরণের পর তার মা ফাতেমা বেগম কমলি ঝালকাঠি থানায় অভিযোগ করতে এলে থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর ফাতেমা বেগম কমলী ঝালকাঠি মানবপাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে নালিশী অভিযোগ দায়ের করলে আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. শফিকুল করিম ঝালকাঠি থানার অফিসার ইনচার্জকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দেন।   

মামলা দায়ের পর তদন্ত শেষে সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর আদালতে হাছিনা বেগম, ঝুমুর আক্তার, মিনতি সিকদার ও যশোরের নাছরিন বেগমসহ চার জনের নামে অভিযোগপত্র দায়ের করেন।

ফাতেমা বেগম কমলীর আইনজীবী বনি আমিন বাকলাই জানান, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চম্পাকে অপহরণ করা আসামিদের মধ্যে মিনতি শিকদারকে ঝালকাঠিতে দায়ের করা মানবপাচারের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অন্যান্য আসামিরা পরবর্তীতে গ্রেপ্তার হয়ে আদালত থেকে জামিন লাভ করে। সোমবার চম্পাকে আদালতে হাজির করার পর মামলাটির পুনঃতদন্তের আদেশ প্রার্থনা করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী ধার্য তারিখে পুনঃতদন্তের আদেশ পাওয়া যাবে।

অলোক সাহা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়