ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ৬ ১৪৩০

বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে হাইকোর্টের নির্দেশ

সেন্ট্রাল ডেস্ক: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১১ ডিসেম্বর ২০১২   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে হাইকোর্টের নির্দেশ

বিশ্বজিৎ দাস হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে ৮জনকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও কয়েক ঘন্টার পর তা অস্বীকার করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা দাবি করেন গ্রেপ্তার নয় চিহ্নিত করা হয়েছে মাত্র।

ওদিকে বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে যাঁদের নাম-ছবি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে এর ব্যাখ্যা ১৩ ডিসেম্বর আদালতকে জানাতে বলা হয়। এসব ব্যক্তি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নিতেও আদালত নির্দেশ দেন। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমে যাঁদের ছবি বা নাম প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তাঁদের কেন গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আবেদনে ওই ঘটনায় জড়িত রফিকুল ইসলাম, মীর মো. নূরে আলম, মাহফুজুর রহমান, ওবাইদুল কাদের, ইমদাদুল হকের নাম আসামি হিসেবে এজাহারভুক্ত করা, নিহত বিশ্বজিৎ দাসের মা-বাবা ও পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যা বের মহাপরিচালক, পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, ঢাকার পুলিশ সুপার, সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক জালাল আহমেদকে আবেদনে বিবাদী করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য: গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তারের জন্য আজকে সকালে আমি নির্দেশ দিয়েছি। আমি এখানে আসার আগ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও আজকের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হবে।’ তিনি দাবি করেন, বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের কেউ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী নন। যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত।
পুলিশের বক্তব্য: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই গণমাধ্যমকর্মীরা গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করতে মহানগর পুলিশের কর্মকর্তাদের ফোন করেন। অনেকেই ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার কার্যালয়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় ও সূত্রাপুর থানায় ছুটে যান। কিন্তু পুলিশের কর্মকর্তারা গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করতে পারেননি। একপর্যায়ে সাংবাদিকেরা গিয়ে কথা বলেন মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ও ডিবির উপকমিশনার মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বেলা পৌনে একটায় সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ ছয়জনকে শনাক্ত করেছে।
বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে গতকাল বেলা একটায় সূত্রাপুর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার দ্বিতীয় তলায় পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মনজুর রহমানের কক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছিল। জানা গেছে, বৈঠকে এসি মনজুর, ওয়ারী অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) গাজী মোজাম্মেল হক, সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আছেন। বৈঠক শেষে এসব কর্মকর্তার কাছে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা কেউই কিছু বলতে রাজি হননি।
থানার একটি সূত্র জানায়, এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শরীফুল ইসলামের অনুসারী ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মী থানায় যান। সেখানে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ঘণ্টা খানেক পর তাঁরা চলে যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসি মনজুর রহমান বলেন, ‘থানায় কেউ আসলেও আসতে পারেন। তবে ছাত্রলীগের কেউ আসার ব্যাপারে আমার জানা নেই।’ তিনি জানান, তাঁর কক্ষে অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকটি ছিল অনানুষ্ঠানিক। তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে কথা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার বিরোধী দলের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একদল কর্মী অবরোধ-সমর্থক সন্দেহে পথচারী বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন। বিশ্বজিৎ শাঁখারীবাজারের দরজির দোকানি ছিলেন। এ হত্যায় জড়িত যাঁদের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাঁদের গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করল বিএনপি: গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা নিরীহ কর্মজীবী তরুণ বিশ্বজিৎকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে যেদিন জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে মাঠে নামান, আমরা সেদিনই বলেছিলাম, আপনি যে আগুন নিয়ে খেলছেন, এর পরিণাম ভালো হবে না। বলেছিলাম, জামায়াত-শিবির কারও গায়ে লেখা থাকে না। ছাত্রলীগ নামধারী গুন্ডারা যেভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন বিশ্বজিৎকে হত্যা করল, তাতে আজ তা প্রমাণিত হয়েছে।’
এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পুলিশকে ব্যবহারের অভিযোগ করে সাদেক হোসেন বলেন, ‘সুযোগ এলে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে এক নম্বর আসামি করে হত্যা মামলা করা হবে। আর যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদেরও হত্যা মামলায় যুক্ত করা হবে।’

অবরোধের সময় পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর দুই ঘণ্টা পর পুলিশ বলছে, কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, জড়িত হিসেবে ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে কেবল।
এদিকে বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে যাঁদের নাম-ছবি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে এর ব্যাখ্যা ১৩ ডিসেম্বর আদালতকে জানাতে বলা হয়। এসব ব্যক্তি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নিতেও আদালত নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমে যাঁদের ছবি বা নাম প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তাঁদের কেন গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আবেদনে ওই ঘটনায় জড়িত রফিকুল ইসলাম, মীর মো. নূরে আলম, মাহফুজুর রহমান, ওবাইদুল কাদের, ইমদাদুল হকের নাম আসামি হিসেবে এজাহারভুক্ত করা, নিহত বিশ্বজিৎ দাসের মা-বাবা ও পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যা বের মহাপরিচালক, পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, ঢাকার পুলিশ সুপার, সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক জালাল আহমেদকে আবেদনে বিবাদী করা হয়।

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়