ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হরতালে সহিংসতায় ব্লেকের উদ্বেগ

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১১ ডিসেম্বর ২০১২   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হরতালে সহিংসতায় ব্লেকের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক হরতাল ও অবরোধে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, হরতাল দেশের ভাবমূর্তিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগ আনার চেষ্টাকে ব্যাহত করে।

বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা ও সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ চায় এবং হরতাল ব্যবসার জন্য বড় ধরনের সমস্যা বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গরিব মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়- তাদের জন্য হরতাল চরম ক্ষতিকর। “তাই আমি মনে করি, উভয় দলেরই হরতাল এড়িয়ে চলা উচিত এবং শান্তিপূর্ণভাবে মতবিরোধ দূর করা প্রয়োজন। সংসদেই আলোচনার মাধ্যমে সব মতবিরোধ দূর করার চেষ্টা করা জরুরি।” রোববার বিরোধী দলের অবরোধের সময় সহিংসতায় তিন জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

পুরান ঢাকায় দর্জির দোকানি বিশ্বজিত দাস নিহত হওয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে ব্লেক বলেন, “আপনাদের অনেক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় এক যুবককে পেটাতে পেটাতে মেরে ফেলার ছবি দেখে আমি আঁতকে উঠেছি।” বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অপরাধীদের শিগগিরই বিচারের আওতায় আনা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে চলমান বিতর্ক সংলাপের মাধ্যমে নিরসনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান ব্লেক। তিনি বলেন, “একটি পদ্ধতি বের করতে দুই দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। আমি নিশ্চিত, তারা যে বিষয়ে সম্মত হবে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে।”

নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো আইন সংশোধনের প্রয়োজন মনে করলে তা নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির সংসদে যাওয়া উচিত বলেও মেনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিএনপিকে সহায়তা দিতে ওয়াশিংটন প্রস্তুত।

গত ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্লেক। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তাকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো আমার জন্য যৌক্তিক নয়। আমি বলব, এটা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের বিবেচনার বিষয়। তাই সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করবো।” 

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম (টিকফা) চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে ঢাকা এগিয়ে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা। এই চুক্তি সই হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে মন্তব্য করে ব্লেক বলেন, “তাই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কীভাবে আরো বাড়ানো যায় এবং আরো বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানের বাধাগুলো কীভাবে সরানো যায় সে আলোচনা হওয়াটা বাংলোদেশের জন্য অবশ্যই লাভজনক।”

গত চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে টিকফা নিয়ে সমঝোতা আলোচনা চলছে। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি তারা। আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কারখানার শ্রম পরিবেশ নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে তাদের। এ বিষয়ে ব্লেক বলেন, শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশের আন্তরিকতা দেখানো প্রয়োজন।

বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ছয়শ’ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়েও কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশের আইনে একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে নিতে ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়