ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আজ মহান বিজয় দিবস

সেন্ট্রাল ডেস্ক: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১২   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজ মহান বিজয় দিবস

ফাইল ফটো

১৬ ডিসেম্বর (রাইজিংবিডি) : আজ অনন্য গৌরবে ভাস্বর ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ জয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার দিন। ৪২তম মহান বিজয় দিবস আজ।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনটিতেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। ঢাকায় দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এই দিনেই স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। অনন্য অর্জনের আনন্দে উদ্বেল জাতি আজ দেশজুড়ে উদযাপন করবে ৪২তম বিজয় দিবস। মুক্তিযুদ্ধে সুমহান বিজয়ের ৪১তম বার্ষিকী।

একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার স্পৃহায় জেগে ওঠা বাঙালিকে স্তব্ধ করতে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় মেতে ওঠে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ২৫ মার্চ কালরাতে। সেই গণহত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের ভাগ্যাকাশে নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে ঘনিয়ে আসে বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট  জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে আত্মসমর্পণ করে ৯১ হাজার ৫৪৯ হানাদার সেনা। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকারের উপস্থিতিতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানের পক্ষে লে. জেনারেল নিয়াজি এবং মিত্রবাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।

আর অবিস্মরণীয় সেই মুহূর্তেই বিশ্ববাসীকে অবাক করে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাঙালি জাতি পায় লাল-সবুজের একটি জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং মানচিত্র। রক্তাক্ত পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় অর্জন ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি।

বাঙালির এই স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় অর্জনের ইতিহাস কেবল ১৯৭১ সালেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের এক বছরের মধ্যেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী আঘাত করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার ওপর। শুরু হয়ে যায় শোষণ-বঞ্চনা আর বৈষম্যের করুণ ইতিহাস।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সেই শোষণ থেকে মুক্তি পেতে বিক্ষুব্ধ বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রথম স্ফুরণ ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এই চেতনার ধারাবাহিক সংগ্রামের অংশ হিসেবে শেখ মুজিব উত্থাপিত ১৯৬৬ সালে ৬ দফা তথা স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন। ১৯৬৯-এ গণতন্ত্র ও ন্যায্য অধিকারের জন্য গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০-এ নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খার বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সে বিজয় পাকিস্তানি সামরিক শাসকচক্র মানতে পারেনি।

ফলে ১ মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের পথ ধরে ঘনিয়ে আসে ৭ মার্চ। ১৯৭১-এর ওই দিন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় স্বাধীনতার অমোঘ বাণী ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মূলত সেদিন থেকেই গোটা জাতির মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন দেশের স্বাধীনতা। ধানম-ির বাসভবন থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার ঘোষণায় শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে দেশবাসীকে অনুরোধ ও নির্দেশ দেন।

শুরু হয় হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার চূড়ান্ত প্রতিরোধ লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস ধরে চলা সেই মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটতরাজের কলঙ্কিত অধ্যায়ের বিপরীতে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের আরেকটি মহান অধ্যায়। সেই অধ্যায়ে ছিল মুক্তিকামী বাঙালির অসম সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথা।

১৭ এপ্রিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধ। শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। জন্ম নেয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’।

আজ বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত উদযাপিত হবে বিজয়ের দিনটি। উৎসবের সমারোহে জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদদের।

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের আত্মত্যাগের কথা। যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।

দিনব্যাপী কর্মসূচি : বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। সূর্যোদয়ের সময় ঢাকার তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনি করে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
 
ভোরে প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধারা, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সকাল ৯টায় তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, কারারক্ষী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সমন্বয়ে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি শারীরীকভাবে অসুস্থ থাকায় প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন।

এ সময় আর্মি এভিয়েশন ও বিমানবাহিনীর ফ্লাইপাস্ট, বিমানবাহিনীর বিমান থেকে প্যারা ট্রুপিং, অ্যারোবেটিকস ডিসপ্লে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকা-ের যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।

বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলকা থেকে বিজয় র‌্যালি বের হবে। র‌্যালি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিলিত হবে। সেখানে স্থাপিত শিখা চিরন্তনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

দুপুরে জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত-প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

সরকারি-বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিজয় দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সংবাদপত্রগুলো বিজয়ের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে।

সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বাদক দল রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করবে।

ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও বরিশালে নৌবাহিনীর কিছু জাহাজ দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর সকাল ৮টায় রাজারবাগ শহীদ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায় এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। বিজয় দিবসের সব অনুষ্ঠান ঘিরেই রাজধানীসহ সারাদেশে গ্রহণ করা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট।

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়