ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ফাউন্টেন পেন: একটি আবেগের নাম

এস আহমেদ ফাহিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৪ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফাউন্টেন পেন: একটি আবেগের নাম

শহীদ মিনার আমাদের গর্ব। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের গভীরতম আবেগ, অনুভূতি। স্বাভাবিকভাবেই এই শহীদ মিনার আমাদের কাছে বড়ই স্পর্শকাতর। শহীদ মিনারের নাম শুনলেই ভেসে ওঠে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা। লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি সেই স্বাধীন দেশের প্রথম ভাস্কর্য শহীদ মিনার।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে শহীদ মিনার। মাতৃভাষার দাবিতে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদ মিনার রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায়  নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও  নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে নোবিপ্রবির শহীদ মিনার কিছুটা ব্যতিক্রম। ১০১ একরের দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যাবে ফাউন্টেন পেনের ডিজাইনে তৈরি শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে আছে। যে কেউ চমকে যাবে এই ডিজাইন দেখে। কেননা, এত বড় ‘ফাউন্টেন পেন’ বা ঝরনা  কলম বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। এখন সবার হাতেই বলপয়েন্ট পেন, নয়তো জেল পেন। কিন্তু ষাট ও সত্তরের দশকের তুমুল জনপ্রিয় এই ‘ফাউন্টেন পেন’-এর রাজত্ব ছিল নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ফাউন্টেন পেন দিয়ে যেই লিখুক, তার লেখা আকর্ষণীয় হয়। কারণ হলো 'ফাউন্টেন পেন' দিয়ে খুব দ্রুত লেখা যায় না। লিখতে হয় আস্তে, যত্ন করে, ঠিক যেভাবে গড়তে হয় আমাদের জীবন। জীবনের নানা উত্থান পতনের মাঝে এগিয়ে যেতে হয় আমাদের। গতির দৌঁড়ে বলপয়েন্ট পেন ফাউন্টেন পেনকে হারিয়ে দিয়েছে সত্যি, তবে রাজকীয়ভাব ও আভিজাত্যকে একটুও টলাতে পারেনি। সেই আভিজাত্য ও মহিমা নিয়েই সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে উপকূলের অক্সফোর্ড নোবিপ্রবির ‘ফাউন্টেন পেন’ শহীদ মিনার।

২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নোবিপ্রবি অলঙ্কৃত হয় এই রত্ন দিয়ে। এই সেই রত্নের রোশনাই পেতে দর্শনার্থীর ঢল নামে প্রতি দিন বিকেলে। মূল বেদি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৬ ফুট। বেদিতে সাতটি স্তর স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে সাতটি ঐতিহাসিক ধাপ নির্দেশক। মূল কলামটির মূল অংশ কালো রঙের, আর ডগায় টকটকে লাল গোলাকার বলটি চোখ জুড়িয়ে দেয়। নোবিপ্রবির এই মিনারটিও সেরাদের সেরার মধ্যে থাকবে। কিন্তু কেন? তার জবাব মননশীল মানুষ মাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন।

প্রথমত, কলম জ্ঞানের প্রতীক আর বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান তৈরির কারখানা। তাই কলম ভাস্কর্য খুবই প্রাসঙ্গিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়। দ্বিতীয়ত, 'বিদ্যানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র'-এ উক্তি কী আশ্চর্যজনকভাবে মিলে গেছে আমাদের ভাষা শহীদদের আত্মদানের সঙ্গে। ফাউন্টেন পেনের পাকস্থলীতে থাকে কালির আধার, আর এখানে প্রতীকীভাবে রয়েছে শহীদদের রক্ত, লাল রঙে। পাথর, চুনাই আর সিমেন্টের বন্ধনে আটকা পড়েছে এই আবেগ। তৃতীয়ত, রক্ত প্রাণের প্রতীক আর কলম মানের, সম্মানের। ভাষা শহীদদের রক্তের আত্মদান তো বাংলা ভাষার, বাঙালির আত্মসম্মান ও অস্তিত্ব রক্ষার। চতুর্থত, অসির চেয়ে মসি বড়, তাই যুগে যুগে অসি বা তলোয়ারের ওপর মসি বা কলমের বিজয়ই হয়েছে। পঞ্চমত, ফাউন্টেন পেন অধুনালুপ্ত হলেও ঐতিহ্য যেমন কখনো হারিয়ে যায় না, তেমনি শহীদদের আত্মদানও অমলিন।

ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ ও সম্মানার্থে নির্মাণ করা হয়েছে এই ফাউন্টেন পেন আকৃতির শহীদ মিনার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ অন্যান্য জাতীয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ছাড়াও স্থানীয়রা শহীদদের সম্মান জানাতে আসেন এই শহীদ মিনারে।

নোবিপ্রবির ফাউন্টেন পেন শহীদ মিনার দেশপ্রেমিক ও সৌন্দর্য পিয়াসীদের ডাকছে। নোবিপ্রবির ১০১ একরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে এই শহীদ মিনার।

কৃতজ্ঞতা: আবিদুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক, ইনফরমেশন অ‌্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

নোবিপ্রবি/এস আহমেদ ফাহিম/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়