অবসাদের কথা শুনবে ‘মনের স্কুল’
এম আর আর তামিম || রাইজিংবিডি.কম
'বিষন্নতা, অবসাদ এবং হতাশা' - তরুণ প্রজন্মের যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিদিনের পড়াশোনার চাপের পাশাপাশি নিত্য-নৈমিত্তিক হাজারো কাজের ভিড়ে হাপিয়ে ওঠা আমরা কজনই বা নিজের মনের যত্ন নেই। অবসাদের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে একসময় অনেকেই আত্মঘাতী চিন্তা করে বসেন। অথচ নিজের মনের যথোপযুক্ত পরিচর্যা করলে আত্মঘাতী চিন্তা করার প্রশ্নই আসে না।
এমন চিন্তাধারা থেকেই একদল উদ্যমী তরুণ তৈরি করেছে একটি সামাজিক সংগঠন। নাম দিয়েছেন 'মনের স্কুল’। স্কুলে যেমন আমাদের পাঠদান করা হয়। এইখানেও তেমনি পাঠদান করা হবে, তবে তা মনের পরিচর্যা কেন্দ্রিক।
বর্তমান প্রজন্মের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হতাশায় ভোগেন। এদের অধিকাংশই জানেন না, কেন তারা হতাশায় ভোগেন। এর চাইতেও ভয়াবহ ব্যাপার হলো, অনেকেই জানেন না কীভাবে তারা এই হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। এদেরকে সাহায্য করতেই খোলা হয়েছে 'মনের স্কুল'। কথাগুলো বলছিলেন মনের স্কুলের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাইরুজ ফাইজা বিথার।
ফাইজা বলেন, ‘আমাদের মাঝে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকেন, কিন্তু প্রকাশ করতে পারেন না। আবার নিজের হতাশা দূরীকরণে মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়াকে পাগলের ডাক্তারি বলে মনে করেন। আমরা এই ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে দিতে চাই।'
শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা দূর করে হাসি-আনন্দ ফিরিয়ে আনতে সংগঠনটি বিভিন্ন কাজের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। তেমনই এক উদ্যোগ হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলুদ বেলুন উপহার দেয় তাঁরা। তাদের দাবি হলুদ বন্ধুত্বের প্রতীক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যবহৃত ইমোজিগুলো আমাদের আনন্দ দেয়। হলুদ বেলুন উপহার হিসেবে দিয়ে আমরা শৈশবের রঙিন সময়গুলো মনে করিয়ে দিতে চাই, শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করে কিছু সময়ের জন্যও যেন কেউ নিজেকে সুখী মনে করতে পারেন, এটাই আমাদের প্রচেষ্টা।
প্রাথমিকভাবে খুলনা শহরে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করলেও রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়েও সংগঠনটি কাজ করছে। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলে সংগঠনটি নিজেদের বার্তা পৌঁছিয়ে দিতে চায় বলে মতামত ব্যক্ত করেন এর সদস্যরা।
সংগঠনের সদস্যরা জানান, হতাশাগ্রস্ত কেউ তাদের ফেসবুক পেজের () ইনবক্সে যোগাযোগ করে সাহায্য পেতে পারেন। প্রয়োজনে সাহায্যপ্রার্থীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।
মনের স্কুলের এমন উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে মনে করেন সমাজবিদরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন অধ্যাপক মোছা. তাছলিমা খাতুন বলেন, 'প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করার জন্য একটি বোর্ড থাকা উচিৎ। আমরা এর লক্ষ্যে কাজ করছি। শিক্ষার্থীরা নিজেদের জায়গা থেকে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা আমাদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক। অনেক শিক্ষার্থীই থাকবে যারা নিজেরা মনের স্কুলের কাছে আসতে চাইবে না, মনের স্কুলের সদস্যদের নিকট পরামর্শ থাকবে তারা নিজেরা যেন অবসাদগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নেয়।'
লেখক: শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
খুবি/তামিম/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন