ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার অহংকার’

আশরাফি দিবা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার অহংকার’

আমার বন্ধুরা যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে লড়ছেন, আমি তখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছি। স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে শুনে এসেছি, ১২ বছরের কষ্ট তখনই সফল হবে, যখন ভর্তিযুদ্ধে বীরের মতো প্রতিপক্ষদের হারিয়ে যেকোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের জায়গা করে নিতে পারবো।

কিন্তু ঠিক যুদ্ধের মুহূর্তেই আমি এডিস মশার কাছে পরাজিত হয়ে ব্যর্থ সৈনিকের মতো শুয়ে আছি। আমি ব্যর্থ কারণ, ছোটবেলা থেকে আমার ছোট মগজে একটি তত্ত্বই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না পারলে আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

আমার এই হতাশাযুক্ত ঘোর অন্ধকার ভবিষ্যৎকে এক পশলা আলো দেখালো ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। নাম শুনে অবাক হচ্ছেন! ভাবছেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে কি জীবনে কিছু করা যায়? ওখানে তো টাকা দিয়েই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। আপনার মতো আমার পরিবারের সবারও এমনই ধারণা ছিল। তবুও সবার মতের বিরুদ্ধে ভর্তি হলাম ড্যাফোডিলে।

প্রাইভেট ভার্সিটির কথা উঠলেই প্রথমে যে কথাটা উঠে, সেটি হচ্ছে প্রাইভেট ভার্সিটির ইট পর্যন্তও নাকি টাকা খায়। কিন্তু আমি যখন ভর্তি হয়েছি নারী শিক্ষার্থি হিসেবে, ১০ শতাংশ বৃত্তি পেয়েছি। শুধু তাই নয়, প্রতি সেমিস্টারে ফলাফলের ওপরও শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয় আমাকে। হ্যাঁ, ড্যাফোডিলে পড়তেও টাকা লাগে। তবে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করতে তাদের ফলাফলের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের শতভাগ বৃত্তির সুযোগও আছে এখানে।

শুনেছিলাম, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির বড় কোনো ক্যাম্পাস থাকে না। একটা বিল্ডিং, কয়েকটা ক্লাসরুমের মধ্যেই এর সীমাবদ্ধতা। এজন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মানসিকতাও নাকি খানিকটা সংকীর্ণ হয়। প্রথম যেদিন সবুজে ঘেরা ১৫০ একরের সুবিশাল আশুলিয়ার ক্যাম্পাসটি দেখেছিলাম, সেদিনই বদলে গিয়েছিল আমার ধারণা। ফুলের নামের বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ ফুলের মতোই সুন্দর। ক্যাম্পাসের পরিবেশ যেমন আমাকে মুগ্ধ করেছে, তেমনি অভিভূত হয়েছি এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদার মানবিকতায় এবং ব্যবহারে।

আমি যখন ভর্তি হই, তখন আমার প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান শুধু ফেসবুক ব্যবহার করার এতটুকুই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম দিনই আমাকে একটি মেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয়া হয়। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় সব নোটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়।

এছাড়াও এখানে বেতন দেয়া থেকে শুরু করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা, পরীক্ষার ফলাফল প্রদান—সবই অনলাইনভিত্তিক। ‘স্টুডেন্ট পোর্টাল নামের সাইটে গিয়ে লগইন করে ঘরে বসেই আমি কোর্স রেজিস্ট্রেশন, কোর্স ফি, রেজাল্ট চেক করা, নিজের প্রফাইল আপডেট, শিক্ষকদের বিষয়ে মন্তব্য দেয়াসহ লেখাপড়া সংক্রান্ত সব কাজ করেত শিখেছি। কয়েক সেমিস্টার পরে একটি ল্যাপটপ দেয়া হয়। সত্যি বলতে, ভার্সিটির এই প্রযুক্তি নির্ভরতায় ধীরে ধীরে আমার প্রযুক্তিজ্ঞান বাড়তে থাকে।

এখানে এসে শুধু পড়াশোনা নয়, আমি শিখেছি ব্যক্তিত্ব গঠন, মানবিকতা এবং স্বাবলম্বী হতে। এখন আমি পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতে পারছি। আমার আশেপাশের মানুষের কাছে শোনা টাকায় কেনা সার্টিফিকেট ড্যাফোডিল আমায় দেয়নি। কিন্তু ড্যাফোডিল আমায় শিখিয়েছে নিজেকে কীভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলা যায়, কীভাবে নিজের যোগ্যতা দিয়ে সফলতার আলো খুঁজে পাওয়া যায়।

আমার মতো এখানে অসংখ্য শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরলেই শোনা যায়, অসংখ্য শিক্ষার্থীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

শুধু পাবলিক নয়, একটি প্রাইভেট ভার্সিটিও যে ভবিষৎ আলোকিত করতে পারে তার ভালো উদাহরণ এসকল উদ্যোক্তা। আর এ উদ্যোক্তাদের নিয়েই বিশ্ব জুড়ে ফুলের রঙে রঙ ছড়িয়ে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে চলছে আমার প্রিয় ক্যাম্পাস। আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার অহংকার।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।


ডিআইইউ/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়