ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিজয় দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

আহমেদ ফাহিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিজয় দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

ছোট-বড় সবার মাথাই বিজয়ের পতাকা। গায়ে সবুজ এবং লাল রঙের পায়জামা-পাঞ্জাবি এবং হাতে লাল গোলাপ। ধীর পায়ে, নতমস্তকে এগিয়ে যাচ্ছেন শহীদ বেদির দিকে। হাসিমাখা মুখ যেন বলতে চাচ্ছে, শত শৃঙ্খল উপেক্ষা করে আজ সবাই মুক্তবিহঙ্গ।

১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে মর্যাদা লাভ করে। দিনটি বাঙালি জাতির জন্য আনন্দের এবং গর্বের এবং বেদনারও। আনন্দের এই জন্য যে, এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়েছে। আ বেদনার এই জন্য যে, ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছেন এবং অসংখ্য নারী সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন এই স্বাধীনতার জন্য। 

মুক্তিযুদ্ধে সবচাইতে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন দেশের তরুণ সমাজ। বিজয় দিবসে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী ওহী আলম বলেন, ‘বিজয় সে তো  গৌরবের, আনন্দের। বিজয় মানেই তো জিতে যাওয়ার স্বাদ। আত্মত্যাগের গল্প। কিন্তু যারা তাঁদের আপনদের পর করে দিয়ে আমাদের এই বিজয় ছিনিয়ে এনে দিয়েছেন, বিজয়ের ৪৯তম বছরেও কি তাঁদের আমরা ভালোবাসতে পেরেছি, প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে পেরেছি। না আমরা পারিনি। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধারা আছেন, যাদের জীবনযুদ্ধ এখনো থেমে নেই। একটু বেঁচে থাকার জন্য, জীবনযাপনের জন্য, খাওয়ার খরচ অথবা চিকিৎসাসেবার জন্য তারা এখনো অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। করছেন মানবেতর জীবনযাপন। এই বিজয়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াতে পারি, সম্মান অথবা শ্রদ্ধাবোধ না জানাতে পারি, তবে আর কবে পারবো? ঠিক যেমন করে ’৭১-এ তারা তাদের এ দেশমাতাকে ভালোবেসে বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাদের সর্বস্ব। চলুন না, এবার আমরা তাদের ভালোবাসাটুকু তাদের কাছে ফিরিয়ে দেই। তাদের পাশে দাঁড়াই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ শাহানুল ইসলাম বলেন, ‘বিজয় দিবস একটি জাতির মুক্তির স্মারক। একটি জাতির নতুন জন্ম। একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। অবশ্যই এই দিবসকে সেই জাতির অন্তরে লালন করতে হবে। আর তার চেতনা আরও গভীর হতে গভীরতর করবার দায় আমাদেরই। যার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ শহীদ। আমরা যেন তাদের রক্তের ত্যাগকে না ভুলে যাই।’

‘বিজয় দিবসকে বিশ্ববাসীর সামনে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের জন্য কি আমাদের আর কিছুই করবার নেই? যেমন বাংলাদেশের পতাকা খচিত স্কুল ব্যাগ, শহীদদের নাম সম্বলিত কলম, খাতার মলাটের শেষ পৃষ্ঠায় সংক্ষেপে লেখা বিজয়ের ইতিহাস ইত্যাদি। ক্লাসে ৫ মার্কের বিজয় দিবস সম্বলিত অ্যাসাইনমেন্ট, ইংরেজিতে প্রতিটি শিক্ষার্থী থেকে ১০ লাইনের বিজয় দিবস সম্পর্কিত লেখা নিয়ে তা ব্যানার, ফেস্টুন বা বিভিন্ন ব্লগে পোস্ট করা, অথবা ম্যাগাজিন বের করা ইত্যাদি কাজগুলো করা যেতে পারে। আমাদের অন্তরে লালন করতে হবে বিজয়ের চেতনাকে। তার জন্যই করতে হবে অনুশীলন। বিজয়ের ইতিহাস সম্বলিত বই উপহার, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক, গান ইত্যাদির মাধ্যমে বিজয় দিবসের চেতনাকে আরও ছড়িয়ে দেয়া যায় সাধারণ মানুষের মাঝে’, বলেন তিনি।

খাদ্য প্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহমাদ উল্লাহ বলেন, ‘বিজয় অনেক ত্যাগের মিশ্রণে গ্রন্থিত ছোট্ট একটি শব্দ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ৩০ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে রক্তাভ মানচিত্র-বাংলাদেশ। অর্ধ-শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে সার্বভৌম সোনার বাংলা। পরাধীনতার জাল ছিন্ন করা স্বাধীন ভূখণ্ডে আজ ৪৮ এর বিজয় উল্লাস। কিন্তু আমরা কি পেরেছি স্বাধীন হতে, বিশুদ্ধ স্বাধীনতাকে ধারণ করতে? বিজয় দিবসের স্বার্থকতা তখনই আসবে, যখন দুর্নীতি, অপশাসন কমবে, মেধার সঠিক মূল্যায়ন হবে। বিজয় দিবসের শিক্ষায় তরুণ সমাজ উজ্জীবিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে একত্রিত হয়ে কাজ করবে।’

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নকিবুর রহমান বলেন, ‘নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী হিসেবে আমি প্রথমেই চাইবো বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে একাডেমির ভবন-৩ এর নামকরণ হোক এবং মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের নামকরণ করা হোক। বিজয় দিবসের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে সকলে মিলে প্রিয় নোবিপ্রবিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা এবং দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসা।’

বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হিমেল শাহরিয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতা অনেক মূল্য দিয়ে কিনতে হয়েছে আমাদের। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে আমাদের অনেক প্রাপ্তিও রয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে, জিডিপি বেড়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে। কিন্তু, স্বাধিকার আদায়ের উদ্দেশ্য কি পূরণ হয়েছে? দূর্নীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, স্বজনপ্রীতি, নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক বৈষম্য এগুলো দিনদিন বেড়েই চলেছে। এসব কারণগুলো দেশকে পিছিয়ে নিচ্ছে। তাই, একজন তরুণ হিসেবে আমি আশা করবো, আমার মাতৃভূমি এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ।’

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী এস জে আরাফাত বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ছিল ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে। কিন্তু বর্তমানে স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল অর্জন দুর্নীতি নামক অপকর্ম কর্তৃক ভূলুণ্ঠিত ও অবহেলিত। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, শোষণের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই দুর্নীতি থেকে কি আমরা মুক্তি লাভ করতে পেরেছি? আজ দুর্নীতি আমাদের প্রতিটা স্তরের কোণায় কোণায়। বর্তমানে  দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের  গুঁটিকয়েক ব্যক্তি  অধিকাংশ সম্পদের মালিক- তারা সমাজে  মহৎ ব্যক্তি, শক্তিশালী ব্যক্তি। কিন্তু একটা সময় ছিল আমাদের এ সমাজে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ঘৃণিত ব্যক্তি। আগেকার দিনে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সমাজে মানুষ ছেলে-মেয়ে বিবাহ দিতেও রাজি হতো না। আর এখন সমাজে  দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, সম্মানিত ব্যক্তি হয়ে পড়েছেন। কিন্তু সমাজের এই অবস্থার জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়নি। তাই আজ বিজয় দিবসে আমাদের নতুন করে শপথ করতে হবে। দুর্নীতিকে ‘না’ বলার অভ্যাস সব স্তর  থেকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


নোবিপ্রবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়