ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্মৃতির পাতায় একদিন

ফয়সাল মাহমুদ নয়ন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মৃতির পাতায় একদিন

সকাল ৭টা। টুংটাং অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। ওঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রওয়ানা হলাম। সবাইকে ৮ টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। সবাই এক হয়ে সকালের নাস্তা সেরে বাসে ওঠে যাত্রা শুরু করলাম।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘তারুণ্য’র আনন্দ ভ্রমণ। গন্তব্য যশোরের ঝাপা বাওর এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি ও মধুমেলা পরিদর্শন। বাস ছেড়ে দিয়েই সাউন্ড বক্সে বিভিন্ন গান শুরু হলো। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি খেজুর গাছকে অতিক্রম করে গানের তালে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলছে বাস।

দুপুর দেড়টার দিকে পৌঁছে গেলাম ঝাপা বাওরে। দুপুরের খাবার সেরে সবাই চললাম বাওর ভ্রমণ শুরু করলাম। নদীর মাঝখান দিয়ে পানি ছুঁই ছুঁই এক সেতু, লোহার পাটাতন দিয়ে বানানো। জোরে হাঁটলে একটু হালকা দোলে। নদীর পাশ দিয়ে সারি সারি নারিকেল গাছ হাজার গুণ বাড়িয়ে তুলেছে নদীর সৌন্দর্য। নৌকা দিয়ে অনেক পর্যটক দূর থেকে ঘুরে আসছেন।

ঝাপা বাওরকে সাক্ষী রেখে ‘তারুণ্য’ টিম গ্রুপ ছবিতে আবদ্ধ হলাম। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়ার জন্য ঝাপা বাওর থেকে প্রস্থান করতে হলো। পথিমধ্যে হঠাৎ গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সবাইকে নেমে অপেক্ষা করতে হলো। পাশে একটা বাড়ি ছিল। বাড়ির মানুষ আমাদের দেখে যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন এবং দুই জগ খেজুরের রস খেতে দিলেন। এমনকি তারা রাতে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইলেন। অচেনা এতগুলো মানুষকে কিছুটা সময়ের জন্য তারা এতটা আপন করে নিতে পারে, তা আমাদের মানুষের প্রতি ভালোবাসা শেখালো।

এই সুযোগে আমরা কুইজ পর্ব সেরে নিলাম এবং আমি সৌভাগ্যক্রমে ২য় স্থান অধিকার করলাম। পাশেই যশোরের মনিরামপুর বাজারে সবাই মিলে একটু ঘুরে এসেছি। সেখানে নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কলা এখানে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে! এক কেজি ৪০ টাকা। কেজিতে ১৭-১৮টা উঠছে। এর আগে কখনো এভাবে কলা কেনা হয়নি। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে আমরা দ্বিতীয় গাড়ির ব্যবস্থা করে মধুমেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।

ফিরতে দেরি হবে সেই কথা চিন্তা করে আব্দুল গফুর গাজী স্যার (তারুণ্যের উপদেষ্টা) আমাদের ৩০ মিনিট সময় দিলেন মেলা ঘুরে যেন বাসের কাছে থাকি সবাই। আমরা প্রথমে মধুসূদন জাদুঘরে প্রবেশ করে মধুসূদনের জীবন বৃত্তান্ত দেখলাম। তার স্ত্রীর ছবি, পত্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বিলেতে থাকা অবস্থায় পাঠানো পত্রসহ অনেক ঐতিহাসিক জিনিসপত্র অবলোকন করলাম।

পরে মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরে দেখলাম, বড় বড় মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, কসমেটিকস, সার্কাস, গাড়ি খেলায় মগ্ন হয়ে গেলাম সবাই। দেরিতে যাওয়ায় গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কবি মধুসূদন দত্তের বাড়িতে ঢুকতে পারলাম না আমরা। মেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মধুসূদন দত্তের সেই চিরচেনা ‘কপোতাক্ষ নদ’। মনে পড়ে গেল সেই বিখ্যাত লাইন, ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে’!

ঠিক ১০টায় আমরা মধুমেলা থেকে প্রস্থান করলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে বাসের ভেতরেই লটারি হলো, অনেকেই পুরষ্কার পেল। আমি তারুণ্য লাইব্রেরির বুক রিভিউয়ে একটি পুরষ্কার এবং কুইজে ২য় স্থান অধিকার করায় আরেকটি পুরস্কার অর্জন করলাম। ততক্ষণে আমরা ক্যাম্পাসের কাছাকাছি চলে এসেছি। সারাটা দিন যেন স্বপ্নের মতো কেটে গেল, স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো একটি দিন!

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়