ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

তরুণদের কাছে ভালোবাসা দিবস

অনিক রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তরুণদের কাছে ভালোবাসা দিবস

আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বজুড়ে সমোচ্চারিত হচ্ছে ভালোবাসার অমীয় বাণী। এমন সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি সচরাচর এই ক্রোধ-সংঘাতের পৃথিবীতে দেখা যায় না। অস্ত্র, হানাহানি, দ্বন্দ্ব, সংঘাত ছেড়ে পৃথিবী আজ যোগ দিয়েছে লাল গোলাপের শুভেচ্ছায়।

ভালোবাসার গুঞ্জনে মেতে উঠেছে পুরো পৃথিবী। কিন্তু এই ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসা এমনও হতে পারে, যেটি বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, অথবা বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা, কিংবা অসহায়-দুস্থ মানুষদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা। ভালোবাসা দিবসের এমন প্রতিপাদ্য আমাদেরকে এতটুকু অবশ্যই জানান দেয়, যে ভালোবাসা সার্বজনীন।

এই ভালোবাসা দিবসের অধিকাংশ জুড়েই রয়েছে আমাদের তরুণ-তরুণীরা। তাদের জীবনের এই সময়ে তারা রয়েছে আবেগ, অনুভূতির চূড়ান্ত পর্যায়ে। আজ শুনবো সেই সব তরুণ-তরুণীদের ব্যতিক্রমী ভালোবাসার কথা, জানবো ভালোবাসা দিবস নিয়ে তারা কে কী ভাবছে।

মাহমুদা আক্তার মুক্তি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মুক্তি। তার কাছে ভালোবাসা মানে হচ্ছে, ‘ভালোবাসা’ ছোট্ট একটা শব্দ, অথচ অপরিমেয় অনুভূতির নাম। জীবনে প্রথম ভালোবাসা ব্যাপারটি আমরা পরিবারের কাছ থেকেই শিখি। যেখানে আমরা সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের, আর বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। পরিবার একমাত্র ভালোবাসার জায়গা, যেই ভালোবাসায় কোনো লেনদেন, বিনিময়ের ব্যাপারগুলো থাকে না।

বাবা-মায়ের পর ভালোবাসা শব্দটি বলতেই আমি যাকে বুঝি, সে আমার একমাত্র ছোট বোন। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে পবিত্র, মধুর, আর খুনসুটির সম্পর্ক হলো ভাই-বোনের ভালোবাসা।

রোবায়েত হোসেন অর্নব

অর্নব একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। ভালোবাসা দিবস নিয়ে তিনি বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তরুণ -তরুণী, প্রেমিক যুগল ও স্বামী-স্ত্রী এই দিনটি তাদের কাছে স্বরণীয় করে রাখার জন্য নিজেদের মতো করে পালন করেন।

বর্তমানে ভালোবাসা দিবসের কথা এলেই সবাই একবাক্যে ধরেই নেই যে, এই দিনটি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী কিংবা ভালোবাসার মানুষটির জন্য। আমার কাছে মনে হয় ভালোবাসা দিবসটি যদি আমরা পরিবারের সাথে না কাটাই, তবে ভালোবাসা দিবসটিই বৃথা যাবে। আর যাই হোক মা-বাবাকে ছাড়া তো ভালোবাসা দিবসের কথা চিন্তাই করা যায় না। এই সে মা, যে আমাদের ভালো রাখার জন্য তার জীবনের সব সুখ শান্তি স্বাচ্ছন্দ্যে ত্যাগ করে দেন। ‘বাবা’ সে তো আমাদের কাছে একজন ‘সুপারম্যান’। যে কিনা আমাদের দু'বেলা ভালো কিছু খাওয়ানোর জন্য তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন। আমার মতে ভালোবাসা দিবসের এই মূল্যবান সময়টুকু বাবা-মায়ের সাথেই কাটানো উচিৎ, জানানো উচিৎ তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা।

তাজরিয়ান শিকদার

তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী। তাজরিয়ানের ভাবনায় ভালোবাসা দিবস।

ভালোবাসা, শব্দটি শুনলে শত মন খারাপের মাঝেও ঠোঁটের কোণায় চলে আসে একটা মুচকি হাসি। যখন দিনটিই ভালোবাসার-ভালো লাগার, তখন সেই দিনটিও কাটে প্রিয়জনের সাথে বহুমুখী আমেজে। প্রিয়জনের সাথে কুশল বিনিময় করে, একে অপরকে উপহার দিয়ে, ফুল দিয়ে এই দিনটিকে প্রায় সকলেই উপভোগ করেন, আর দিনটি ঠাঁই করে নেয় সকলের প্রাণে। এই দিনে ভালোবাসা কেবল একজনকে কেন্দ্র করে নয় বরং ভালোবাসা হয়ে ওঠে সার্বজনীন।

একজন তরুণী হিসেবে এই দিনটিকে আমি অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি। বিশেষ এই দিনে আমি নিজের পরিবারের সকলের সাথে সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে থাকি। পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্নীয়-স্বজন সকলের সাথেও কুশুল বিনিময় করি। দিনটিতে ভালোবাসা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রত্যেক ভালোবাসা দিবসে বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে পথশিশুদের মধ্যে ফুল ও বিভিন্ন উপহার দেয়ার চেষ্টা করে থাকি।

ভালোবাসা দিবসে শুধু নিজেদের মধ্যেই নয় বরং সকলের মধ্যে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে এই দিনটি পূর্ণতা পায়। তাই প্রত্যেকের উচিৎ প্রত্যেককে ভালোবাসার রঙে রাঙানো।

মাহমুদুল আমিন টনি

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র টনি। তিনি বলেন, ভালোবাসা প্রত্যয়টি চারটি অক্ষরেই সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসা ব্যাপক, ভালোবাসা বিস্তৃত এবং সবার।

ফাগুনের গুঞ্জনে প্রকৃতিতে এসেছে ভালোবাসা নামক মহান দিবস। একসময় শুধু পশ্চিমা বিশ্বের গুটিকতেক দেশে এটি পালন করা হতো। বর্তমানে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালন করা হয়। এদিনে প্রিয়জনকে ফুল ও বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দিয়ে থাকে অনেকেই। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা ভালোবাসা খুঁজে পাই, মায়ের সাথে, বাবার সাথে, ভাই-বোনের সাথে, বন্ধু-বান্ধব এমনকি স্টেশন অথবা ফুটফাতে থাকা পথশিশুর জীবনে।

ভালোবাসা আসে আত্মানুভূতি থেকে। তাই, আত্মার সম্মেলনই ভালোবাসা দিবসের প্রত্যয় হওয়া উচিৎ। ভ্যালেন্টাইনস ডে'কে সংকীর্ণ দৃষ্টিতে না দেখে, এই দিনটিকে ভালোবাসাময় করতে সবার উচিৎ অহংবোধ থেকে বেরিয়ে সর্বত্র ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটানো।

আয়শা আক্তার শিলা

শিলাও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ভালোবাসা দেখেছেন এক ভিন্ন আঙ্গিকে। তার কাছে ভালোবাসা মানে এমন একটি অনুভূতির নাম, যার ভিত্তি হচ্ছে আবেগ। কোনো মানুষের প্রতি যখন নিজের আবেগ ধরে রাখা যায় না, তা হচ্ছে তার প্রতি ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার মানুষ যে-কেউ হতে পারে।

আমার জীবনে আমার ভালোবাসার মানুষটি আর কেউ নন, আমার প্রিয় মা। যার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই বেশি। যিনি আমাকে স্বপ্ন দেখাতে শেখায়, প্রতিদিন নতুন করে বাঁচতে শেখায়। প্রত্যেকটি সন্তানের জন্য তার মা শ্রেষ্ঠ, আর আমার জন্য তিনি অতুলনীয়। প্রত্যেক মা একজন আদর্শ মা হতে পারলেও, সব মা সন্তানের ভালোবাসার পাত্রী এবং বন্ধু হতে পারে না। তাই, আমি আমার মাকে বলতে চাই ‘ভালোবাসি তোমায়’। আমার ভালোবাসা দিবসটি ও তার সাথে কাটাতে চাই, জানাতে চাই সে আমার কত কাছের। তাই, আমার ভালোবাসার দিনটি শুধু তার।

সাদিয়া আরেফিন

সাদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবসের অর্থ আমাদের সমাজে বদলে গেছে। অনেকের ধারণা ভালোবাসা দিবস মানেই অপবিত্রতা আর নোংরামির ছড়াছড়ি। সত্যিকার ভালোবাসা এখনো টিকে আছে। সেই ভালোবাসা সর্বস্তরের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য।

ভালোবাসা দিবসটি আমার সবসময়ই পালন করা হয় ভালোবাসার মানুষগুলোকে নিয়ে। আমার কাছে ভালোবাসা মানেই মা- বাবা এবং পরিবার। বিশেষ দিবসে তাদের সাথে আমার মায়ার বাঁধন আরো দৃঢ় হয়। আমি চাই আমার পরিবারও আমাকে অনেক ভালোবাসুক। তাদের ভালোবাসার কারণ হতে চাই। মানুষকে ভালোবাসতে হলে কোনো বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয় না। তাদেরকে সর্বক্ষণই ভালোবাসা যায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগ (২য় বর্ষ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়