ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

একুশ আমার প্রথম পরিচয়

জুয়েল মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একুশ আমার প্রথম পরিচয়

একুশ মানে বাঙালি জাতির অন্যায়ের সাথে আপোস না করার গৌরবময় ইতিহাস। একুশ মানে রক্ত দিয়ে কেনা আমাদের মায়ের মুখের ভাষা। কেউ যখন আমার কাছে আমাদের পরিচয় জানতে চান, আমি একুশের কথা বলি। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারের কথা বলি, যারা আমাদের ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন। সেই একুশই আমাদের প্রথম পরিচয়।

এই ভাষাতেই আমরা গান গাই, স্বপ্ন দেখি, জেগে রই, কথা কই। ভাষার দাবিতে আমাদের যে ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছেন তাদের সম্মানে, বাংলা ভাষার সম্মানে একুশ ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সম্মান। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১০ সাল থেকে জাতিসংঘ প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।

এই একুশের শক্তিই আমাদের একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম বাংলাদেশের পথ দেখিয়েছিল। যে বাংলাদেশ আমাকে আমার ধর্ম দিয়ে, আমার লিঙ্গ দিয়ে বিবেচনা করবে না, আমাকে কথা বলার স্বাধীনতা দেবে, আমাকে স্লোগানের স্বাধীনতা দেবে। একুশ আমাকে শিখিয়েছে কেমন করে সকল ষড়যন্ত্রকে যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হয়। একুশ মানে আমি বুঝি একটি চেতনার নাম, বোধ ও বুদ্ধি দিয়ে চলার নাম।

এই মুহূর্তে পৃথিবীর ৩০টি দেশের অন্তত ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু রয়েছে। যেখানে বাংলা ভাষা পাঠদানসহ চলে গবেষণার কাজ। এটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য অত্যন্ত গর্বের।

একুশের সেই অমর আত্মত্যাগ নিয়ে গীতিকার আব্দুল গাফফার চৌধুরী লেখেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। সত্যিই ভাইয়ের রক্ত দিয়ে কেনা ‘একুশ’ আমরা ভুলতে পারি না।

তাদের সেই ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা আজ বিশ্ব দরবারে। বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে সিয়েরা লিওন। বাংলা ভাষা এখন পৃথিবীর এক বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত ভাষা। পৃথিবীর জনসংখ্যার নিরিখে প্রায় ২৪ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। বিশ্বে বহুল প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে সংখ্যানুসারে বাংলা ভাষার স্থান চতুর্থ। ইংরেজি, চৈনিক, স্প্যানিশ এদের পরই বাংলা ভাষার স্থান।

৫২ সালের সেই ‘একুশ’ আমাকে শিখিয়েছে কেমন করে অন্যায়ের বিরদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। ‘একুশ’ আমাকে শিখিয়েছে কেমন করে মর্যাদা নিয়ে বাচঁতে হয়। আমার কাছে একুশ মানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জ্বালানি। আমার কাছে বাংলা ভাষা মানে কেবল কিছু বর্ণমালা নয়। আমার কাছে বাংলা মানে অভুক্তর মুখে খাবার, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, পীড়িতদের সেবাদান।

আমরা প্রায়ই আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা ভুলে যাই। ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেরাই এই ভাষার দূষণ ঘটাই। বাংলার সাথে ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ভাষা মিশিয়ে। পৃথিবীর অনেক দেশের ভাষাই হারিয়ে গেছে এই ক্রমাগত দূষণ চর্চার অভাবে। এই ভাষাও এভাবে বাংলিশ হলে যে একদিন হারিয়ে যাবে না, তা কিন্ত নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই ভাষার দূষণ রোধে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


রাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়