ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মিষ্টি আলুর খোসায় বেকারি প্রোডাক্ট

চৌধুরী মাহরীন তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মিষ্টি আলুর খোসায় বেকারি প্রোডাক্ট

খাদ্য এবং পুষ্টি, একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে থাকলেও বর্তমানে এসে আমরাই এদের মধ্যে তুলে দিয়েছি বিচ্ছেদের দেয়াল। বেঁচে থাকা এবং সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য। কিন্তু পুষ্টির বিষয়টিকে প্রায় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আমরা শুধু খাবারের স্বাদ এবং পরিবেশনের দিকে ঝুঁকে পড়ছি। ফলে নিজেদের অজান্তেই ধাবিত হচ্ছি পুষ্টিহীনতার মতো মারাত্মক সমস্যার দিকে।

পুষ্টিহীনতা আমাদের দেশে বেশ পুরনো একটি সংকট। আর বর্তমান সময়ে এসে আমাদের কর্মব্যস্ততা এবং খাদ্য-পুষ্টিবিষয়ক অসচেতনতা ব্যাপারটিকে যেন উদাসীনতার মোড়কে আরো আবদ্ধ করে ফেলেছে।

কৃষিখাতে বাংলাদেশের সাফল্য অসামান্য। প্রতিবছর ধান, গম, ভুট্টা এসবের পাশাপাশি উৎপাদিত আরো নানা জাতের শাকসবজি এবং ফলমূল এই ক্ষেত্রকে করে তুলেছে আরো বৈচিত্র্যময়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, প্রতিবছর উৎপাদিত এসব শাক-সবজি এবং ফলফলাদির অধিকাংশই পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহৃত হয় না। উৎপাদনের তুলনায় এদের ব্যবহার প্রায় শুন্য। ফলে, অধিকাংশই খেতে কিংবা হিমাগারেই নষ্ট হয়। এরকমই একটি সবজি মিষ্টি আলু (Ipomoea batatas)।

পুষ্টি ও গুণগত মানের দিকে লক্ষ্য করলে মিষ্টি আলু অত্যন্ত উপাদেয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল, ডায়েটারি ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কিন্তু প্রতিবছর আমাদের দেশে উৎপাদিত মিষ্টি আলুর তুলনায় এর ব্যবহার অতি নগন্য৷ এর অন্যতম কারণ অনাগ্রহ এবং প্রতিকূলতা।

এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের একদল নবীন উদ্ভাবক। অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধান এবং স্বল্প সময়ে সহজে অধিক পুষ্টি আহরণের লক্ষ্যে তাঁরা তৈরি করছেন মিষ্টি আলুর খোসা এবং মিষ্টি আলু থেকে তৈরি কম্পোজিট বেকারি প্রোডাক্ট। কেক, বিস্কুট, বান; এ ধরনের মুখরোচক বেকারি খাবার ছোট-বড় নির্বিশেষে আমরা সবাই খেতে পছন্দ করি। সকালে কিংবা বিকেলের নাস্তায় হালকা খিদে মেটাতে আমরা প্রায়ই এসব খাবারের উপর নির্ভরশীল।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে অনেকেই মিষ্টি আলুর ভেতরের অংশ খেয়ে থাকলেও এর খোসা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয়। অসামান্য পুষ্টি সমৃদ্ধ এই খোসা থেকে তৈরি ফর্টিফাইড এসব বেকারি প্রোডাক্ট খিদের সাথে সাথে পূরণ করবে আমাদের পুষ্টির চাহিদা। দূর করবে ভিটামিন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব। এর খোসায় বিদ্যমান ফাইবার কাজ করবে গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টাইনাল এবং অবেসিটির মতো মারাত্মক সমস্যার সমাধান হিসেবে। এছাড়াও গমের আটায় বিদ্যমান প্রোটিন ‘গ্লুটেন’, অনেকেই গ্লুটেন হজম করতে পারেন তথা অসহনশীল। সেক্ষেত্রে মিষ্টি আলুর খোসা এর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এতে করে যেমন অর্জিত হবে স্বল্প খরচে পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণের মাত্রা, সেইসাথে নিশ্চিত হবে পরিবেশ বান্ধব শিল্পোৎপাদন নীতি। কেননা, এই প্রকল্পে নিশ্চিত হবে প্রোডাক্ট এবং বাই প্রোডাক্ট দু'টোরই শিল্প সংক্রান্ত প্রয়োগ, যা পরিবেশে বর্জ্য নিঃসরণের হারও কমাতে সাহায্য করবে।

স্টেট ইউনিভার্সিটি  অব বাংলাদেশের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের  সহকারী অধ্যাপক ড. শরীফা আক্তার (প্রধান গবেষক)  এবং প্রভাষক  মো. আসাদুজ্জামান (সহযোগী গবেষক) এর তত্ত্বাবধানে এই উদ্ভাবনী কাজে অংশ নিয়েছে  ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগেরই তিনজন শিক্ষার্থী  নাঈমা রহমান, মাহবুবুর রহমান এবং চৌধুরী মাহরীন তাসনিম। বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, MST(Minstry of Science & Technology) এর অনুদানে এটাই স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রথম প্রকল্প।

আমাদের ব্যস্ত এবং কর্মময় জীবনে স্বল্প সময়ে সহজে পর্যাপ্ত পুষ্টিগ্রহণ নিশ্চিত করতেই খাদ্যপ্রকৌশলীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিত্যনতুন উদ্ভাবনী সমাধানের পথ উন্মোচন করতে। আমরা আশাবাদী,  এ ধরনের নবীন উদ্ভাবক এবং তাদের অভিনব উদ্ভাবনের মাধ্যমেই নিরসন হবে খাদ্য ও পুষ্টিহীনতার মতো মারাত্মক সব সমস্যার। সেইসাথে তৈরি হবে নবীন উদ্ভাবক। 


এসইউবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়