ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৬৭ বছরের স্মৃতি যেখানে গ্রথিত

সাইফুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৬৭ বছরের স্মৃতি যেখানে গ্রথিত

৩১ মার্চ, ১৯৫৩ সাল। প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়। ৬ জুলাই প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিয়োগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ক্লাস শুরু হয়েছিল রাজশাহী কলেজে। পরে ১৯৫৮ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসের ভবন নির্মাণ শুরু হয়। আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে মতিহারের সবুজ চত্বর।

একে একে তৈরি হয় শহীদুল্লাহ্ কলা ভবন, মমতাজউদ্দীন কলা ভবন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবন, প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং বিজ্ঞান ভবনগুলো। এত বড় বিল্ডিং তৈরির ইট বাইরে থেকে কিনে সংকুলান সম্ভব নয়। তাই তৈরি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভাটা। বর্তমান কুদরত-ই-খুদা বিজ্ঞান ভবনের জায়গায় ছিল সেই ভাটার অবস্থান। এ ভাটার ইট দিয়েই একে একে নির্মিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক কাঠামো।

সেই সময়ের বেশকিছু পুরাতন ইট সংরক্ষণে রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে। শুধু ইট নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ঐহিত্যগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভাটাটি বিলুপ্ত হয়েছে সময়ের প্রয়োজনে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তার চিহ্ন রেখে গেছে প্রাচীন প্রত্যেকটা ভবনের গাঁথুনিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে তার শৈশব, কৈশরের এমন আরো অনেক স্মৃতি রয়েছে এ আর্কাইভে। তাহলে আগে জানা যাক আর্কাইভ জিনিসটা কী? আর্কাইভ হলো- ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন সরকারি, বেসরকারি, নথিপত্র, দলিলাদি, পুরনো বিরল পুস্তকাদি, পাণ্ডুলিপি ইত্যাদির সংগ্রহশালা। আর্কাইভ এখন একটা দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণাগার এবং একটা জাতির স্মৃতিময় তথ্যের ভাণ্ডারও বটে।

এই আর্কাইভে স্থান পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেস থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক ও জার্নাল। বিভিন্ন সময়ে স্মারকচিহ্ন, বিভিন্ন বিভাগের অনুষ্ঠানমালার সিডি। এর প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বর্তমানে এর তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন সাদেকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘একটি আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করা খুব কষ্টের কাজ। তবে, একদিন রাবির এ আর্কাইভটি খুব সমৃদ্ধ হবে বলে আমি আশা করছি।’

আজ যা নতুন বর্তমান, আগামীতে তাই পুরনো-অতীত। সময়ের প্রবাহে আজকের বর্তমানটাই স্মৃতি হয়ে যাবে। আর্কাইভের জন্য প্রয়োজন পুরনো ঐতিহ্যের। তাই এর কাজ শুধু পুরনো ঐতিহ্য সংরক্ষণ নয়, নতুন স্মৃতির ডকুমেন্ট রাখাও এর অন্যতম কাজ।

তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নকশা রাখা হয়েছে এতে। আর্কাইভের জন্য কেনা হয়েছে একটা আধুনিক স্ক্যানার। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ডকুমেন্ট স্ক্যান করে রাখা হচ্ছে তাতে।

২০১৯ সালের ২৬ মার্চ রাবি উপাচার্য ড. অধ্যাপক আব্দুস সোবহান আর্কাইভটির উদ্বোধন করেন। এই আর্কাইভ গঠন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন বিলেতে পড়াশোনা করেছি, তখন আমি প্রথম দেখেছি এমন আর্কাইভ। যেটা দেখেই আমি মুগ্ধ হয়েছি। তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখেছি আমার যদি কখনো সুযোগ হয় আমি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করবো এবং সেটা পেরেছি। এটিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যে আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কেউ ঘুরতে আসেন, তাহলে সে এ বিশ্ববিদ্যায়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভালোভাবে জানতে পারবেন।’


রাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়