ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ইবি লেখকদের কথামালা

শাহাব উদ্দীন ওয়াসিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ৫ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইবি লেখকদের কথামালা

‘ভালো বই পড়া যেন গত শতকের মহৎ লোকের সাথে আলাপ করার মতো।’ হ্যাঁ এটিই এনড্রিউ ল্যাঙের সেই বিখ্যাত উক্তি। এছাড়া দেকার্তে বলেছেন, ‘A room without books is like a body without soul’ প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।’ এমন হাজারো উক্তি মানুষের জন্য লিখে গেছেন বিশ্বের সব বিখ্যাত মনীষীরা।

একজন ভালো পাঠক সৃষ্টিতে ভালো লেখকের গুরুত্ব সবারই জানা। আজ আমরা তেমনটি কিছু অভিজ্ঞ ও কিছু তরুণ উদীয়মান লেখক ও তাদের প্রকাশিত বই সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করবো পাঠকদের কাছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করতে তারা তাদের ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের একুশে বইমেলায় ইবির ১৬ জন লেখকের ২১টি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী

লেখক তাঁর বইটি সম্পর্কে নিজেই বলেছেন, ‘নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান’ গ্রন্থটি মূলত আমার রচিত ১২টি ইংরেজি গল্পের সংকলন। এটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে এবং গ্রামীণ জনপদের পটভূমিতে রচিত। আমি ইংরেজি ভাষায় রচনা করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, আমি চেয়েছি এই বাংলাদেশের প্রান্তিক জনপদের কিছু মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার যে কাহিনীগুলো, সেগুলো বিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষী মানুষের ভেতরেও সঞ্চারিত হোক। এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই আমি গল্পগুলো ইংরেজি ভাষায় রচনা করেছি।

১২টি গল্পের মধ্যে প্রায় ১০টি গল্পই বিশ্বের বিভিন্ন নাম করা পত্র-পত্রিকা ও জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেখান থেকে বিভিন্নভাবে গল্পের মূল্যায়নও হয়েছে। এই গ্রন্থটির রিভিও হয়েছে। এবার যেটি বের হয়েছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশি এডিশন। ২০১৮ সালে যখন নিউ দিল্লি থেকে প্রকাশিত হয়, তখন ভারতের বিখ্যাত পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান লিটারেচা’-এ এর রিভিউ প্রকাশিত হয়। পরে হিন্দি ও ফরাসি ভাষায় নয়া দিল্লি থেকে অনুবাদ হয়। এরপর সেন্স পাবলিসিং নামে অস্ট্রেলিয়ার একটি পাবলিশিং তারাও এই বইটির রিভিউ বের করে। আমি নিজে এই গল্প ১২টি রচনা করতে পেরে নিজেকে খুব গৌরবান্বিত মনে করছি।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গত একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে এই গল্পগুলোর একটি গল্প ‘নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান’। এটি আমাদের ইংরেজি বিভাগের ‘সাউথ এশিয়ান লিটারেচার’ নামক একটি কোর্সের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সেটি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হবে। এটা আমার একটি শ্রেষ্ঠ অর্জন, কারণ আমার রচিত একটি গল্প বাংলাদেশের একটি অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য হলো।

অধ্যাপক ড. নাসিম বানু

‘প্ল্যানিং, মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ইন বাংলাদেশ’ বইটি মূলত দেশের জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন পরিকল্পনার আলোকে সাজানো হয়েছে।

তিনি তার বই সম্পর্কে বলেন, আমি জানা মতে বাংলাদেশে (প্ল্যানিং, মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন) এর উপর কোনো থিওরিটিক্যাল বই নেই। তাই যারা দেশের রিসার্চার, পলিসি মেকার বা ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে কাজ করে, তাদের জন্য এই বইটি একটি মৌলিক বই হিসেবে কাজ করবে। এছাড়াও এটি মনিটরিং এবং ইভালুয়েশন বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বইটিতে বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের প্ল্যানিং, মনিটরিং এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আলোকে তথ্য, তত্ত্ব ও উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য, এনজিও, উন্নয়ন বিষয়ে গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

ইমপ্লিমেন্টেশন, মনিটরিং, ইভালুয়েশন, ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, পাবলিক পলিসি, এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টসহ সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আমার লেখা ৩০টিরও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, বলেন তিনি।

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ আমার অনুদিত ৩টি বই (ফেরেস্তার প্রার্থনা, মিস জাকার্তা, সুখস্বপ্ন) ও ১টি মোলিক গ্রন্থ (আরবি সাহিত্য মঞ্জুষা। ৩) প্রকাশিত হয়েছে। ‘ফেরেস্তার প্রার্থনা’ বিশিষ্ট মিসরীয় নাট্যকার তাওফিক আল-হাকিমের নাটকের অনুবাদ। নির্যাতিত মানবতার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ও স্বৈরাচারী মোড়লদের মূলোৎপাটন এ নাটকের মূল প্রতিপাদ্য। নাজিব কিলানির ‘মিস জাকার্তা’ বইটি আরবি থেকে অনূদিত হয়েছে। অত্যাচারের নিগড়ে আবদ্ধ ইন্দোনেশিয়ার জনগণের মুক্তির আত্মচিৎকার এ উপন্যাসের মৌল উপজীব্য।

‘সুখস্বপ্ন’ বইটি নাজিব কিলানির গল্পগ্রন্থ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ে সুখস্বপ্ন, প্রিন্সেস জোয়ান, স্বপ্ন বিভোর, মিস মাদাইন, বাতায়নসহ মোট ১১টি ছোট গল্প রয়েছে। ‘আরবী সাহিত্য মঞ্জুষা। ৩’ বইটি আধুনিক ও উত্তরাধুনিক আরবী সাহিত্যের খ্যাতিমান ৮ জন কবি-সাহিত্যিকের জীবন ও তাদের সাহিত্যে সমৃদ্ধ। এ পর্যন্ত ড. কামরুল হাসান ৪টি মৌলিক ও ১৮টি অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেছেন।

মাসুম আলভী

মাসুম আলভী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও তরুণ কবি। তিনি তার শেষ বিকেলের চিঠি বই সম্পর্কে বলেন, শৈশবের স্মৃতিগুলো আজও আমরা চোখ বন্ধ করলেই কল্পনায় আঁকতে পারি। খুব সহজে কাউকে বিশ্বাস করা, চাওয়া-পাওয়াগুলোও অল্প। সেখানেই গড়ে ওঠে কিছু নিষ্পাপ সম্পর্ক। আধুনিক প্রযুক্তি, অপসংস্কৃতি আর নেশার অন্ধকার জগতের বাইরে এসে প্রাণচঞ্চল, প্রাণবন্ত তারুণ্যের মাঝেই কিছু তরুণ পৃথিবীকে যেমন পেয়েছেন তার চেয়ে সুন্দর করে সাঁজানোর জন্য দিনরাত স্বপ্ন আঁকেন।

কাইয়্যুম আহমেদ

‘ইলুমিনাতি’ বইটির বিষয়বস্তু গুপ্ত সংগঠন ‘দ্য ইলুমিনাতি’ নিয়েই। এর অর্থ ‘বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন কোনো দল’। বৈশ্বিক পরিমন্ডলে ইলুমিনাতি একটি পরিচিত শব্দ হলেও বাঙালিরা এ সম্পর্কে জানে না বললেই চলে। পৃথিবীর রাজনৈতিক পরিমণ্ডল কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, কীভাবে আমরা আমাদের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল দেশকে হারাতে চলেছি, আমাদের খাদ্যের উপর কীভাবে বিভিন্ন ভেজাল ও বিষ জাতীয় দ্রব্য মিশে যাচ্ছে, ডলার নির্ভরশীল দেশগুলো অবস্থা ও পরবর্তী পরিণতি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ক্ষমতা, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ কীভাবে বাড়ছে এবং এর জন্য দায়ী কারা, কারা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে অদৃশ্য আঙ্গুলের মাধ্যমে পরিচালনা করে ইত্যাদি বিষয়াদি এই বইয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)।


ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ