ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আজ দেখা যায়নি সেই পতাকার ফেরিওয়ালা

নাজমুল হুদা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজ দেখা যায়নি সেই পতাকার ফেরিওয়ালা

‘মা গো, ভাবনা কেন? আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে’ এই গানের মতো আজকের দিনে শান্ত হয়েই থমকে আছে পুরো দেশ। ব্যস্ত শহরে কাঁচা-পাকা চুলওয়ালা লোকটাও ফেরি করে বেড়াচ্ছেন না স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

১০ বছরের ফাহিম কাঠিতে কাগজের তৈরি পতাকা বানিয়ে এ গলি-সে গলি দৌড়াচ্ছে না। স্মৃতিসৌধের ছবি একে এবার রং পেন্সিলের পুরস্কারটাও পাবে না দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া তুবা। অনার্স পড়ুয়া ফাহিমও বন্ধুদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে পারছেন না স্মৃতিসৌধে। এই আক্ষেপে আছেন গফুর মিয়াও। রিকশার সামনে পতাকা বেঁধে তিনি মনের আনন্দে পারছেন না রিকশা চালাতে।

‘তবু শত্রু  এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি, তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি’ হ্যাঁ এভাবেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। প্রতিবাদী বাঙালি ২৬ মার্চ বিশ্বের বুকে উড়িয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা। এরপর থেকে স্বাধীনতা দিবসের মূল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান পালিত হয় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়েও হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে, সেই চিত্র এবার যেন থমকে দিলো করোনা নামক মহামারি ভাইরাস। ১৯৭১ সালের মতো এবারও বাঙালি অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলা করছেন নীরব দর্শক হয়েই।

করোনাভাইরাস রোধে এ বছর বাতিল করা হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সব ধরনের জনসমাগম ও অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই শিশু, তরুণ, প্রবীণ সবার আনুষ্ঠানিক অনুভূতি থমকে আছে। কিন্তু বীর শহীদদের প্রতি হৃদয়ে আছে গভীর শ্রদ্ধা।

তিতুমীর কলেজের তরুণ শিক্ষার্থী মামুন সোহাগ বলেন, ‘১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এসেছিল স্বাধীনতা। নানা চড়াই-উৎরাই পার করে পেয়েছিলাম একটি ভুখণ্ড, নতুন রাষ্ট্র। আর আজ আমরা নেমেছি এক ভিন্ন যুদ্ধে। মহামারি করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব থমকে গেছে। আমরা চালাচ্ছি নিজ নিজ ঘরে নিজেকে আবদ্ধ রাখার যুদ্ধ। কে জিতবে, কে হারবে এ যুদ্ধে, সেটা কেউ জানি না। সত্যি, পৃথিবী ভালো নেই। মহামারি কাটিয়ে আমাদের স্বাভাবিক জীবনের স্বাধীনতা ফিরে আসবে, সেই প্রত্যাশায় আছি। আমার বিশ্বাস স্বাধীনতা এসেছিল, স্বাধীনতা আসবে।’

এ বছর করোনাভাইরাসের ভয়ে ঘরে থাকায় শহীদদের স্মরণে ঘরে বসেই বই পড়ছেন বিনায়েক রহমান কীর্তি। তিনি বলেন, ‘প্রতিবার স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে যেতাম, কলেজে যেতাম। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকতাম। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তাই এবার স্বাধীনতা দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করতে পারছি না। তবে ঘরে বসেই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বই, লেখা পড়ছি।’

স্বাধীনতা দিবসে আবারো স্বাধীন হতে চান করোনা আতঙ্কে থাকা মানুষ। তাই তো সবাই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে ঘরে বসে সচেতন থেকেই লড়াই করে যাচ্ছেন। এভাবেই প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে আবারো উড়াতে চান প্রিয় দিবসে দেশের পতাকা।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, (অনার্স ৩য় বর্ষ) সরকারি তিতুমীর কলেজ।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়