ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এ লড়াই বেঁচে থাকার

অনিক রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এ লড়াই বেঁচে থাকার

‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমায় একটি স্তুতি রয়েছে, ‘যে করে খনিতে শ্রম, যেন তারে ডরে যম’। সত্যিই যারা বলগেট থেকে মাথায় করে বালু বা পাথর নামান, তাদের দেখলে এই সিনেমার স্তুতির কথাই মনে পড়ে। চারদিকে করোনায় মানুষ ঘর থেকে বের না হলেও গাবতলী, আমিন বাজার তুরাগ নদের ঘাটে এমনই চিত্র দেখা যায়।

কী আশ্চর্য! পৃথিবীতে যে করোনা নামক মহামারি চষে বেড়াচ্ছে, সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। সরকার বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে সবাইকে নিষেধ করেছেন, মনে হয় তাদের কাছে পৌঁছেনি সেই বার্তা।

এ যেন ভয়কে জয় করে টিকে থাকার লড়াই। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ভয় তাদের নেই। তাদের একমাত্র ভয়, না খেয়ে মারা যাওয়ার। পেটের জ্বালাই তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি কষ্টের। আর এজন্যই করোনার ঝুঁকি নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এরা সমাজের এমনই এক শ্রেণি, যাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রতিদিনই করতে হয় হাড়ভাঙা পরিশ্রম। স্বয়ং করোনার মতো মরণব্যাধিও তাদের দমাতে পারে না। করোনায় গোটা বিশ্ব যখন গৃহবন্দী, ঠিক তখনো যেন এই শ্রেণির প্রশান্তি নেই।

তুরাগ নদের তীরে অবস্থিত আমিন বাজার এলাকায় পেটের দায়ে দিনমজুরের কাজ করতে আসেন অনেকেই। কেউ কয়লা টানেন, কেউবা জাহাজ থেকে নামান সিমেন্ট, বালু, পাথরসহ নানাবিধ পণ্য। তাদের কেউই ভাবছেন না এই মরণব্যাধি নিয়ে। বোঝা যায়, তাদের এমনটি ভাবার সময় নেই।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানেন, কিন্তু পেটের ক্ষুধা তাদের কাছে বড়। তারা কেউই ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করতে রাজি নন।

‘করোনা ভাইরাস নিয়া তো ভয় লাগেই, তাতে তো আর আমরা বইসা থাকতে পারি না। পেটের দায়ে আমাগো কাজ চালায়া যায়তে হইবো।’ এমনটি বলছিলেন, দিনমজুর সামাদ।

অর্থাৎ এক ধরনের বাধ্য হয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। নেই কোনো রোগ প্রতিরোধক মাস্ক, গ্লাভস জাতীয় কিছু। হতদরিদ্র এই গোষ্ঠী জানেও না হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ কী। রোগ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাও নেই তাদের। শুধু যা আছে সেটি হলো দৃঢ় মনোবল, অসীম সাহসিকতা আর বুকভর্তি আরেক দিন বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা।

শুধু পেটের টানেই করোনার এই দিনগুলোতেও তাদেরকে করতে হচ্ছে হাড়ভাঙা পরিশ্রম।

রুবেল নামের একজন ৬০ বছর বয়সী শ্রমিক বলেন, ‘আমার পরিবারে ৫ জন মানুষ। দুই মাইয়া, আর এক পোলা। আমার বউ অসুস্থ। আমি কাজ না করলে খাইবো কী ওরা? তাই আইছি কামে।’

আমরা হয়তো কখনোই এই শ্রেণির মানুষদের আত্মকথা জানবো না, জানবো না তাদের হৃদয়ের জখম কত গভীর। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নিয়েই যেন তাদের জন্ম হয়েছিল। সমাজে লোকচক্ষুর আড়ালে এই মানুষগুলো অনবরত কাজ করেই যাবেন, এটাই বাস্তব।


জবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়