ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চিলেকোঠার ভালোবাসা

মুছা মল্লিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ২৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিলেকোঠার ভালোবাসা

ইট-পাথরের বিশাল নগরীর চার দেয়ালের মাঝে আমাদের চোখের আড়ালে পড়ে আছে চিলেকোঠার মতো ছোট্ট ছোট্ট অনেক ভালোবাসার গল্প। সেখান থেকেই একটা ছোট সংসারের ভালোবাসার মুহূর্তগুলো নিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে গল্পটা।

এক.

রোজ সকালের মতো শুভ্রা সিঁড়িতে বসে আছেন। পেছন থেকে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন স্বামী সজল। শুভ্রা মৃদু স্বরে ডাকেন, সজল ও সজল। সজল সাড়া দেন, হ্যাঁ বলো।

‘এই যে প্রতিদিন সকালে তুমি আমার চুল আঁচড়ে দাও। লোকে দেখলে কী বলবে?’ সজল মুচকি হেসে বলেন, ‘লোকের কথায় কী আসে যায়! সুয়োরানী দুয়োরানীর গল্প মনে নেই? অন্য কেউ যদি পরে তোমার মাথায় তাবিজ-কবজ পুঁতে দেয়? আমিতো আমার শুভ্রাকে সাদা বক কিংবা পাখি হয়ে হারাতে দিতে পারি না।’

‘ঢং! হয়েছে, এবার ছাড়ো। রান্নাঘরে না ঢুকলে পেটে কিছুই পড়বে না।’

দুই.

শুভ্রা চলে যায় রান্নাঘরের দিকে। সজল নির্লিপ্ত চাহনিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। তারপর অফিসের জন্য তৈরি হন।

বের হওয়ার সময় প্রতিদিনকার মতো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সজলের হাতে লাঞ্চবক্স এগিয়ে দিতে দিতে শুভ্রা বলেন, ‘আপনার দুপুরের খাবার দেওয়া আছে। ঠিক সময়ে খেয়ে নেবেন। আর কেউ একজন ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকবে, সেটা মাথায় রাখবেন মহাশয়।’

তিন.

অফিসের কাজের ফাঁকে দু’জনের দুয়েকবার কথা হয়। কখনো বা হয় এসএমএসে। ব্যস্ততার মাঝে মোবাইলের স্ক্রিনে শুভ্রার ছবিতে তাকিয়ে তার মনের প্রশান্তি যোগান সজল।

চার.

ঘরে শুভ্রার অপেক্ষা পর্ব চলে। সজল তাকে যতদূর আবিষ্কার করেছে, অপেক্ষা শুভ্রার কাছে সব থেকে পছন্দের। যদিও সে ঠিকঠাক শাড়ি পরতে পারে না, তবুও পেঁচিয়ে শাড়ি পরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে সজলের বাড়ি ফেরার। মাঝে মাঝে সজলের বাড়ি ফেরার রাস্তায়...।

পাঁচ.

কলিংবেলের শব্দে দরজা খোলেন শুভ্রা, হাতে লাঞ্চবক্স আর একগোছা ফুল ধরিয়ে দিয়ে সজল বলেন, ‘জনাবা, আপনার জিনিস’। চিরকুটের লেখার দিকে তাকিয়ে শুভ্রা হাসে। সজলকে না বললেও সে জানে এই মুহূর্তটা শুভ্রার সবচেয়ে পছন্দের।

ছয়.

কোনো কোনো দিন কানে কিংবা খোঁপায় ফুল গুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শুভ্রা। ইচ্ছে হলে ছাদে দোলনায় বসে দোল খান। সজল গিয়ে তার পাশে দাঁড়ান। তারা গল্প করেন, ওই নীল আকাশটার গল্প, জীবনের গল্প। মাঝে মাঝে বেসুরা গলায় গুনগুনিয়ে গান ধরেন সজল ‘টুকরো করে কাছি, ডুবতে রাজি আছি, আমি ডুবতে রাজি আছি’।

সাত.

মাঝে মাঝে খুনসুটিতে মেতে ওঠেন তারা। শুভ্রা তার বাবার বাড়ি থেকে আনা আচারের প্রশংসা করেন। সেখানে ভাগ বসাতে চান সজল। শুভ্রা বলেন, ‘তুমিতো সব আচার এক দিনেই শেষ করে ফেললে’। সজল ‘শ্বশুর বাড়ির আচার না খেয়ে কি থাকতে পারি?’

সময় চলে যায় আলো নিভে অন্ধকার নেমে আসে, চলতে থাকে তাদের ভালোবাসার খুনসুটিগুলো...

আট.

টিভির স্ক্রিনে শুভ্রার গভীর মনোযোগ। সজল চায়ের কাপ হাতে রুমে প্রবেশ করেন। শুভ্রার হাতে চায়ের কাপ এগিয়ে সজল বলেন, ‘আপনার চা, চিনি কম।’ শুভ্রা মনে মনে হাসেন।

নয়.

শুভ্রা বই পড়তে ভালোবাসেন, আর সজল শুনতে। রাতের খাওয়া শেষে শুভ্রা সজলের পায়ের পাশে বসে বই পড়ে শোনায়।

সজল প্রশ্ন ছুড়েন, বুড়ো হয়ে গেলেও কি এভাবে গল্প শোনাবে? শুভ্রা বই পড়া থামিয়ে জবাব দেন, ‘চোখে যখন দেখতে পাবো না, তখনো বিড়বিড় করে টুনাটুনির গল্প শোনাবো’।

গল্প শুনতে শুনতে সজল ঘুমিয়ে পড়েন। শুভ্রা তাকিয়ে থাকেন সজলের ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারার দিকে।

দশ.

এভাবেই বাড়তে থাকে দিন, বাড়তে থাকে প্রেম। শহরের চার দেয়ালের মাঝে গড়ে ওঠে আরেকটি চিলেকোঠার অকৃত্রিম ভালোবাসা।


ডিআইইউ/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়