ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্মৃতির অ্যালবামে শুধু তোদের ছবি

সুলতানা সুমি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৯ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মৃতির অ্যালবামে শুধু তোদের ছবি

কলা ভবনের মুক্তমঞ্চে প্রায়ই একদল ছেলে-মেয়েকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। কখনো সকাল ৮টার ক্লাস করতে আগে চলে এসে, কখনো দুপুরের বিরতিতে, কখনো বা ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পর।

একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, একজন তার নোটখাতা নিয়ে বসেছেন অন্যজনের কাছে। আরেকজন আপন মনে গান করছেন, কয়েকজন তাকে ঘিরে বসে আছেন। একজন হয়তো নতুন একটা টিউশন নিয়ে বিপদে পড়েছেন, আরেক বন্ধুকে ধরছেন সাহায্যের জন্য। অন্যজন কোথায় গিয়ে বিরিয়ানি খাওয়া যায়, সে পরিকল্পনা করছেন।

ক্লাস শেষে এইখানে বসে আড্ডা দেওয়া তাদের নিত্য দিনের রুটিনের কাজ। বিকেলে হয়তো তাদের দেখা যাবে টিএসসিতে, সন্ধ্যায় সমাজকল্যাণ চত্বরে। কখনো হাকিম চত্বরে, কখনো কার্জন হলের মাঠে। এই বিশাল ক্যাম্পাসজুড়ে তাদের নিত্যদিন দেখা যায়। কখনো ৭ জন, কখনো বা ৪ জন অথবা ২ জন।

এটা আমাদের গল্প। আমি, দিপান্নীতা, আঁখি, সাঞ্জু, রাজিব, শিপন, হাসান, রাকিব, ফারিহা, মীম, প্রান্ত, সিফাতের মতো কত ঢাবিয়ানের গল্প। কোনো এক বিকেলে হয়তো শান্তি চত্বরে সাঞ্জুর বানানো নুডলসের আড্ডা বসে। কখনো ওর বাসা থেকে পাঠানো আচার চাটতে চাটতে আমাদের মায়ের কথা মনে পড়ে। আবেগে আপ্লুত হই আমরা। দেখা গেলো হুট করে একদিন শারমিনের আম্মু বিরিয়ানি বানিয়ে পাঠিয়েছেন। মধুর ক্যান্টিনে বসে আন্টির হাতের স্বাদ চিরস্থায়ী থাকার প্রার্থনা করতে করতে গোগ্রাসে খাচ্ছি আমরা।

ক্যাম্পাসের মাঠজুড়ে আমাদের কত গল্প জমা আছে। আড্ডার গল্প, হাসির গল্প, ঝগড়ার গল্প, মন খারাপের গল্প। এক বন্ধুর মন খারাপ হলে, আরেকজন টেনে টেনে তাকে মল চত্বর নিয়ে যায়। আহা শান্তি, মল চত্বর মানেই যেন শান্তি। মন ভালো করার মল চত্বর।

আর একটু বৃষ্টি হলে ফুলার রোডে হারিয়ে যাওয়ার গল্প জন্ম নেয়। কখনো প্রিয়জনের হাত ধরে, কখনো বন্ধুদের সাথে। এক ঝাঁক পাগলামি আর এক গাদা ছবি জমা হয় স্মৃতির অ্যালবামে।

সেই ক্যাম্পাসে আজ ঝুলছে তালা। দ্বিতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে হলগুলো। ফাঁকা ক্যাম্পাস ভরে আছে বিষন্নতায়। টিএসসির স্বপন মামার চায়ের দোকান আজ ফাঁকা। টিএসসির ভেতরে যেন কত যুগ হয়ে গেলো কোনো কনসার্ট হচ্ছে না।   মধুতে আর কাউকে আড্ডা দিতে দেখা যায় না।

কোভিড-১৯ এর তাণ্ডব ঘরবন্দি করে রেখেছে আমাদের। সেই সাথে শুন্যতায় বন্দ করেছে ক্যাম্পাসকে। আর আমাকে বানিয়েছে নস্টালজিক। মাত্র ১০ দিন হলো ক্যাম্পাস ছেড়ে বাসায় আছি। কিন্তু মনে হয়, যেন ১০টি বছর পেরিয়ে গেলো। যেন কতকাল দেখিনা ক্যাম্পাসকে, গোলাপের ঝুড়ি হাতে রিয়াকে, স্বপন মামা আর ওদেরকে। যাদের ছাড়া একদিন কাটতো না আমার।

প্রাণের ক্যাম্পাসকে অনেক মিস করছি। আর তোদেরকেও। জানি না কবে শেষ হবে এই যুদ্ধ। আর কবে ফিরে যাব ক্যাম্পাসে, হাতে হাত ধরে চারুকলায় আড্ডা জমাবো আমরা...।

সাবধানে থাকিস সবাই। ক্যাম্পাসে ফিরে গেলেও শুন্যতা থেকে যাবে, যদি তোদের কাউকে হারাই। তোদের একজনকে ছাড়াও ক্যাম্পাসটা ফাঁকাই থেকে যাবে তখন...।

লেখক: শিক্ষার্থী, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ (২য় বর্ষ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ঢাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়