ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চল্লিশ বছর পর হঠাৎ একদিন

স্বপ্নীল আকাশ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ৩১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চল্লিশ বছর পর হঠাৎ একদিন

কোনো এক দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছি বছর দুই আগে। ঘর থেকে তাই আর বাইরে যেতে পারিনা।আগের মত তেমন শক্তি পাইনা।

ঘরের কোণে পরে থাকা ফোনটি অনেক কষ্ট করে হাতে নিয়ে ফেসবুক লগ ইন করলাম।হঠাৎ মন কল্পনার জগতে সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে চলে গেলো।

যে ছেলেটা সারাদিন বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে তার দিন পার করতো।  সারাদিন আড্ডা আর বন্ধুদের ছবি এডিট করে ফানি ছবি বানিয়ে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে দিয়ে সবাইকে হাসাতো। কখনো বা জোকস বলে বন্ধুদেরকে বিনোদন দিতো। সারাদিন মোবাইল নিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। অথচ সে বুড়ো আজ বহুবছর পর ফেসবুকে লগ ইন করলো।

আইডিটা খোলার পর দেখি ইনবক্সে বন্ধু আমিনুর, আলী, রিদয় এবং রনির ম্যাসেজ। যাদের সাথে দিন রাত জমিয়ে আড্ডা দিতাম। কত দুষ্টুমির স্বাক্ষী তারা। অথচ তাদের আইডিটা চিনতেই পারছিলাম না। সব অপরিচিত লাগছে।

স্কুল,কলেজ এবং  বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ বছরের শিক্ষাজীবনে বহুসংখ্যক বন্ধু পেয়েছি, যারা সবাই এখন আমার মত বুড়ো। হয়তো তাই তারা ফেসবুক চালানো ছেড়ে দিয়েছে। হঠাৎ চ্যাটলিস্টে যেতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩/৪ জন বন্ধুর আইডি নীল বাতি জ্বলে থাকতে দেখলাম। তারপর যখন  ইনবক্সে ঢুকলাম ঢুকতেই আমার সেই দুইজন  ফ্রেন্ড রিদয় এবং রনির ম্যাসেজ। যারা পরীক্ষা কিংবা ক্লাসের আগে ম্যাসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করতো আজকে কোনো এক্সাম বা এসাইনমেন্ট আছে কি না?

প্রথমে তাদের ম্যাসেজ দেখে ভাবলাম হয়তো এগুলোই জিজ্ঞেস করেছে। তখনই মনে পড়লো আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় লাইফ শেষ হয়েছে। সে সাথে শেষ হয়েছে কুইজ/এক্সাম কিংবা প্রেজেন্টেশন এসাইনমেন্ট এর টেনশনও।

তারপর  ধীরে ধীরে বন্ধুদের ম্যাসেজগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকলাম।হঠাৎ সেই বন্ধুটার একটা ম্যাসেজ পেলাম।যাকে সব ক্লাশের সবাই আলী ভাই বলে ডাকতো।

‘বন্ধু শরীরটা ভালো নেই। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারিনা। বেশিদিন হয়ত বাঁচব না।'

অথচ এই  বন্ধুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতাম সারাদিন পাবজি কিংবা নতুন যত ধরনের অনলাইন গেমস আসতো সবসময় সেসব গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ঢুকতেই দেখতে পেলাম বন্ধুদের মাঝে সবচেয়ে- ভদ্র বলে পরিচিত  সাব্বির  নামে ছেলেটির ম্যাসেজ। তাও সেটা  ছিল ৫ বছর আগের। খবর পেয়েছি, ৪ বছর আগেই সে মারা গেছে।

যে মেয়েটা সারাদিন ফেসবুকে সেলফি আপলোড করতো, কোনো রেস্টুরেন্টে গেলে খাবারের ছবি আপলোড দিতে ভুলতো না। আমার সেই প্রিয় বান্ধবি মৃত্তিকা, শুনেছি সেও দু'বছর আগে মারা গেছে। ওর সাথের চ্যাটিংয়ের কথাগুলো পড়ে খুবই ভাল লাগছিল।

বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে আড্ডায় কত মজা করতাম সবই পরে আছে।ওদের অধিকাংশই আজ আর বেঁচে নেই।

এরপর চ্যাট লিস্টের একদম শেষে পেলাম তার ম্যাসেজ। হ্যাঁ আমার সেই শাম্মির আইডি। ওর কোন খবরই জানি না। অথচ কত ভালোবাসতাম তাকে। আজ অনেক দিন পর তার কথা মনে পড়ছে।

তার আইডিটায় ঢুকলাম সর্বশেষ পোস্ট ছিল ১১ বছর আগে। পরিবার এবং নাতি নাতনির সাথে ছবি। খুব সুখী পরিবার। ওকে যেদিন শেষ দেখেছিলাম চুলগুলো খোলা ছিলো। মাথায় ছিলো লাল রংয়ের খোপা আর লাল শাড়ি পরিহিত ছিলো। সে কি আজো বেঁচে আছে? জানি না।মনের অজান্তেই

কান্না চলে আসলো। কাঁদলাম।

হঠাৎ আয়নায় নিজের ছবিটা দেখলাম। হ্যা আমিও তো বুড়ো হয়ে গেছি।

লেখক: ফার্মেসী বিভাগ, ৩য় বর্ষ, ড্যাফোডিল  ইন্টারন্যাশনাল  ইউনিভার্সিটি।

 

ঢাকা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়