ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বুয়েটের স্বপ্নসারথি

নাফিস ইবনে ওলি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বুয়েটের স্বপ্নসারথি

‘শুধু বইয়ের গণ্ডির ভেতরে নিজেকে আবদ্ধ রেখে কখনোই একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষার সঠিক উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে পারে না। তাকে জানতে হবে তার সমাজ সম্পর্কে, তার সমাজের মানুষ সম্পর্কে। আর সে লক্ষ্য সামনে রেখেই স্বপ্নসারথির পথ চলা শুরু।’ বলছিলেন স্বপ্নসারথির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি, বুয়েট আইপিই ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিজিৎ সাহা।

‘স্বপ্নসারথি’ বুয়েট ১৭ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি স্বপ্নের সংগঠন। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর মাত্র ৭ জন সদস্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। খুব স্বল্প পরিসরে নিজেদের যাত্রা শুরু করলেও আস্তে আস্তে এর পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রতিনিয়ত এতে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আরো বেশ কিছু মানুষ, যাদের বেশির ভাগই দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থী। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩২০ জন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বপ্নসারথি সাধারণ মানুষের পাশে প্রতিনিয়ত দাঁড়ানোর চেষ্টা করে গিয়েছে। প্রধানত শিক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা এই মৌলিক দুটি চাহিদাকে সামনে রেখে কাজ করছে স্বপ্নসারথি। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই এখন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

বেশ কয়েকজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে সাহায্য করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা। এছাড়াও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন- সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় তাদের সাথে মিশে কাজ করছে সংগঠনটি। তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হয়েছে সবসময়।

সংগঠন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এর সদস্য ও পুরকৌশল ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদিয়া তাহসিন বলেন, ‘আমাদের সমাজে অসহায় মানুষ আছেন, আবার অনেক মানুষ আছেন, যারা নিজের সাধ্যমতো অন্যের উপকার করতে চান। স্বপ্নসারথি এই দুই দলের মধ্যে সেতু স্বরূপ একটি প্ল্যাটফর্ম।’

‘স্বপ্নসারথির মানুষগুলো বড্ড স্বার্থপর। এরা নিজের সুখের কথা ভাবে। তাদের সুখ কোথায় জানেন? শত ব্যস্ততার মধ্যেও ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে যখন নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে অটিজম সেন্টার কিংবা বৃদ্ধাশ্রমের মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারে, তখন এরা সুখী হয়। এ মানুষগুলোর খুশিতে নিজেকে শামিল মনে হয়’, বলেন তিনি।

বর্তমানে যখন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনাভাইরাস নামক মহামারিতে ভুগছে, তখন হাত গুটিয়ে না বসে এগিয়ে এসেছে স্বপ্নসারথি। এ সময় ঢাকাসহ দেশের ৪টি হাসপাতালে চিকিৎসকদের মাঝে মাস্ক, গ্লাভস, সার্জিক্যাল ক্যাপ, গগলসসহ প্রায় পৌনে দুই লক্ষ টাকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিতরণ করেছে সংগঠনটি।

এছাড়াও ‘বিদ্যানন্দ-এক টাকায় আহার’ এবং ‘শাহনাজ ইব্রাহীম ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে অসহায় মানুষ এবং লকডাউনে আটকে পড়া মানুষের মাঝে খাবার বিতরণে ভূমিকা রাখে স্বপ্নসারথি। পাশাপাশি বুয়েট রসায়ন বিভাগের উদ্যোগে এবং বুয়েট অ্যালামনাইদের সংগঠন ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ ও ‘রক্ষী’র সাথে একত্র হয়ে সারাদেশে প্রায় ৮০টি হাসপাতালে কয়েক হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার পৌঁছে দেয়ার মহাযজ্ঞে ‘স্বপ্নসারথি’ শুরু থেকেই তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে।

স্বপ্নসারথির সদস্যরা মনে করেন, নিজেদের আলোকিত করলেই এই দেশকে আলোকিত করা সম্ভব। তাই LetsBeTheLight স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিনিয়ত হাজার মানুষের স্বপ্ন পূরণ করে আলোকিত এক দেশ গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ছুটছে এই সারথিরা।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ বলেন, ‘আমরা আশা করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামাজিক স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে মূলধারায় যুক্ত করার সাথে সাথে আরো বেশ কয়েকটি সেক্টরে আমরা নিজেদের পদচিহ্ন রাখতে সক্ষম হব। এর জন্য আমাদের আরো লোকবল প্রয়োজন। তাই আমরা বুয়েটের বাইরে অন্যান্য ভার্সিটিতে স্বপ্নসারথির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে চলছি।’

স্বপ্নসারথির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ‘Shopno Sarothi-স্বপ্নসারথি’।


বুয়েট/দীপ্ত/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়