ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ওদের পাশে বাপ্পী

নাজমুল হুদা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ১০ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ওদের পাশে বাপ্পী

তখন রাত ১২টা। করোনা আতঙ্কে নিস্তব্ধ ঢাকা। জনমানব শূন্য ল্যাম্পপোস্টের পথ। চারদিক লাইটের আলোয় আলোকিত। খাবার হোটেল বন্ধ, মার্কেট বন্ধ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ।

এই আলোয় পথে পথে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায় কিছু অভুক্ত কুকুর। অলিগলিতে খেতে না পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিষন্ন মুখে। একই আলোয় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন মশিকুর রহমান বাপ্পী। পেটের কষ্ট যারা বলতে পারে না, তাদের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য প্রতিদিনই রাতের অন্ধকারে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

বাপ্পী পেশায় একজন শিল্পী। পশুপাখিদের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই নিয়েছেন এই উদ্যোগ। শুধু কুকুরকে খাবার দিয়েই সন্তুষ্ট নন ‘বাউল এক্সপ্রেস’ ব্যান্ড দলের এই লিড ভোকালিস্ট। সঙ্গে ফুটপাতবাসীর মাঝেও এক বেলা নিজের বাড়িতে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করছেন। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন বন্ধু বুলবুল ও খালাতো ভাই জিহানকে। ২৫ মার্চ রাতে ১৫-২০টা কুকুরের ক্ষুধা নিবারণ দিয়ে শুরু করা এই কাজ থেমে নেই এখনও।

রাজধানীর রামপুরা, হাজিপাড়া, খিলগাঁও ও কারওয়ানবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় ফুটপাতবাসীর মাঝে খাবার বিতরণ করেন এই গায়ক। এ সময় অভুক্ত কুকুরগুলোকেও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ান এই পশুপ্রেমী। প্রতিদিনই চলে এ কার্যক্রম। এই কাজের শুরুটা জানতে চাইলে বাপ্পী বলেন, ‘প্রথমে নিজের অর্থায়নে এই কার্যক্রম শুরু করি। পরে ফেসবুকে বন্ধুদের আহ্বান জানিয়ে বলি, যার যার জায়গা থেকে যেন এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে অনেকেই উৎসাহী হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তা দিয়েই নিয়মিত এই কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

ফুটপাতবাসীর জন্য সবজি দিয়ে রান্না করা পাতলা খিচুড়ি ও মুরগির মাংস স্বাস্থ্যসম্মত প্যাকেটে মুড়িয়ে সরবরাহ করেন। আর প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০টি অভুক্ত কুকুরের জন্য আলাদাভাবে গরুর ছাঁট মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ান। তিনি নিজেই রান্না করেন কুকুরের খাবার।

বাপ্পী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে নিম্নবিত্ত মানুষদের মতো কষ্ট পাচ্ছে পথে ঘুরে বেড়ানো কুকুরগুলোও। মানুষের ক্ষুধা লাগলে বলতে পারেন, কিন্তু কুকুর পারে না। একদিন বাজারে গিয়ে লক্ষ করলাম, ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, তারপরেই এই উদ্যোগ নেওয়া। তাই ভাবলাম যতটুকু পারি যদি অভুক্ত মানুষ আর কুকুরগুলোকে খাওয়ানো যায়, তাও কিছুটা উপকার হয়। এরপরেই শুরু করে দেই তাদের এক বেলা খাবারের কাজ। এ কাজে আশেপাশের অনেকেই সহযোগিতা করেছে।’

তবে, তার এ কাজের প্রশংসা করেছে অনেকেই। আবার অনেকে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন উল্লেখ করে বাপ্পী বলেন, ‘এই কাজে অনেকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপশি তিরষ্কারও করেছেন। অনেকেই বলেছেন, কয়েকদিন পর মানুষ না খেয়ে থাকবে, সেখানে মানুষের চিন্তা না করে কুকুরের জন্য এত ভাবনা কেন!’

তবে নিন্দুকের কটুকথা ছাপিয়ে করোনাভাইরাসের দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ কাজ করে যেতে চান বাউল এক্সপ্রেসের এই শিল্পী।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়