ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘করোনায় ইতিহাস গড়তে পারে শিক্ষার্থীরা’

সোহাগ মনি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ১৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘করোনায় ইতিহাস গড়তে পারে শিক্ষার্থীরা’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেকোনো দেশের জন্যই সম্পদ। প্রজ্ঞা, মেধা আর মননশীলতায় তারা দেশের অন্যান্য জনগণের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শুধু পাঠ্য বইয়ে সীমাবদ্ধ হওয়া উচিৎ নয়। এই শিক্ষা হবে অনেক বেশি বিস্তৃত, জীবন উপযোগী।

বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বকে নতুন করে গড়ে তোলার শিক্ষা দেয়। আর প্রাপ্ত এই শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেশ, সমাজ, আর মানুষের প্রয়োজনে। দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের মেধা কাজে লাগানো প্রয়োজন সব শিক্ষার্থীদের। নিজেদের অবস্থান থেকে যে যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, সে বিষয়ে দেশের মানুষের সেবা করা উচিৎ। বলা যায়, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্তব্য। কেননা, দেশের সাধারণ মানুষের অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে দেশের মানুষের ঘাম জড়িত।

বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে এখন ক্রান্তিকাল। করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ। সাধারণ মানুষেরা বিপাকে। ঘর থেকে বের হতে না পারায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা খাবার জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থায় সাধ্যমত সহযোগিতা করা উচিৎ। শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে পারেন এ আপদকালীন সময়ে।

নিজেরা উদ্যোগ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে সময়েরও খুব একটা অভাব হবে না।  দীর্ঘ এই ছুটিতে অযথা সময় নষ্ট না করে, এই সময়গুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে সবার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছেন, যারা প্রতিবেশীকে সাহায্য করবে এই ক্রান্তিকালে, তাদের অ্যাসাইনমেন্টে ৫ নম্বর দেওয়া হবে। এমন ঘোষণা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভালো কাজে যুক্ত করতে শিক্ষকরাও এভাবে প্রণোদনা দিতে পারেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাধারণ মানুষের খাদ্য সহায়তার জন্য নিজেরা ফান্ড গঠন করেছে, সেখান থেকে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সুবিধা পাবে। এভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ নতুন কিছু চিন্তা করতে পারে, যা দেশের প্রয়োজনে কাজে লাগবে এবং এই ক্রান্তিকালে একটি মানুষ হলেও উপকৃত হতে পারে।

অতীত ইতিহাসের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই যেকোনো দুর্যোগে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। বন্যা, খরা, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে শিক্ষার্থীরা ছিল। আমরা যদি ভাষা আন্দোলনের কথা বলি, আমরা যদি গণঅভ্যুত্থানের কথা বলি, এসব ক্রান্তিকালে হাল ধরেছে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

মহান মুক্তিযুদ্ধেও সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ ছাড়াও শৈল্পিক, সাংস্কৃতিক, কার্যক্রম করে মানসিক প্রণোদনা যুগিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সরাসরি শারীরিকভাবে অংশগ্রহণ ছাড়াও অনেক অবদান রাখা যায়। শিক্ষার্থীদের যেকোনো সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও মানুষকে অনেকটা স্বস্তি দিতে পারে।

করোনা নিয়ে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে সারা দেশে। আর এগুলো সাধারণ মানুষেরা বিশ্বাস করছে খুব সহজেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সচেতন নাগরিক হিসেবে গুজবকে প্রতিহত করতে পারে। আশেপাশের মানুষকে গুজব সম্পর্কে বুঝিয়ে বলতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা নজরদারি করে গুজবের বিপক্ষে প্রচারণা চালাতে পারে। সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই।

দেশের এই ক্রান্তিকালে শুধু সরকার কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর ভরসা করলে চলবে না, নিজেদের অবস্থান থেকে যখন যা পারা যায়, তা করতে হবে সাধারণ মানুষের কল্যাণে। গ্রন্থগত বিদ্যা যদি প্রয়োজনে কাজে না লাগে, তবে সে বিদ্যা পরের হাতের সম্পদের মতোই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখন নিজেদের প্রমাণ করার সময়।

সংকটকালীন মুহূর্তে অনেক ছোট কাজই অনেক ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে। এই মুহূর্তে নিম্ন আয়ের মানুষের ত্রাণ নিশ্চিত করে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হতে পারে দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধে যাওয়ার মতো। এক সময় ইতিহাস হয়ে থাকবে আজকের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেশের মানুষ মনে রাখবে তাদের, জাতি হিসেবে আমরা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্ব করতে পারব। তাই এখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অঙ্গীকার হওয়া উচিৎ মানুষের পাশে থাকা।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।


কুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়