ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘জন্ম থেকে জ্বলছি, আমি পথশিশু বলছি’

আবু তালহা আকাশ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৩১ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘জন্ম থেকে জ্বলছি, আমি পথশিশু বলছি’

পথশিশু শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। পথশিশু বলতে সেই সব শিশুদের বোঝায়, যাদের কাছে রাস্তাই তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান। তাদের জন্মও দেখা যায় রাস্তার পাশের কোনো এক বস্তিতে বা তার আশেপাশের কোথাও। এদের নেই কোনো বাসস্থান, শহরের বিভিন্ন রাস্তা, পার্ক, বাস বা রেলস্টেশন অথবা খোলা কোনো জায়গায় তাদের বসবাস।

পথশিশুরা স্কুলে যায় না, বরং তাদের জীবন চলে মূলত রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে থাকা বস্তুগুলো কুড়িয়েই। যেগুলো বিক্রি করে তারা খাবার যোগাড় করে। এর কারণ তাদের বাবা-মা কাজ করতে অক্ষম বা তাদের উপার্জন অতি সামান্য, যা তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট নয়। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন বেড়েছে, আর রাস্তার শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৪০ লাখেরও বেশি জনে। যদিও এই সংখ্যা নিয়ে সরকারি কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) নামের একটি সংস্থার মতে, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশের ঘুমানোর জন্য কোনো বিছানা নাই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ শিশু উন্মুক্ত স্থানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয় এবং ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখবার কেউ নেই। বাবার কোলে অপার স্নেহ আর মায়ের আঁচলে মুখ লুকানোর স্বর্গীয় সুখ তাদের কপালে জোটেনি। ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই ওরা অনাদর, অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হয়। মানুষের ধিক্কার, চড়-থাপ্পড়সহ নানা শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়সহ সব প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ওরা কারো সহানুভূতি পায় না কখনো।

আমরা সাধারণ মানুষ এই মহামারি করোনা থেকে বাঁচতে কতই না পদক্ষেপ নিচ্ছি, অথচ এই শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতন করা তো দূরের কথা, তারা ঠিকমতো তিন বেলা খেতে পারছে কি না সে খবর নেওয়ারও কেউ নেই। করোনার হাত থেকে বাঁচতে পুরো দেশ যেখানে লকডাউন, পথশিশুরা তাদের নিত্য দিনের যে কাজ তা তারা করতে পারছে না। রাস্তার পাশে তারা যেসব কাগজ কুড়িয়ে, রাস্তায় চলমান পথিকের কাছে হাত পেতে তারা যে খাবার সংগ্রহ করে তা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

বিভিন্ন সংস্থা/সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু খাবার সহায়তা তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হলেও সে সুবিধা প্রত্যেকের কাছে যেমন পৌঁছাচ্ছে না/যারা পাচ্ছে তা তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে একবেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে কোনো রকমে অতি কষ্টে তারা দিনযাপন করছে। জন্মের পর থেকেই তাদের এই কষ্ট দেখে এবং তা উপলব্ধি করে একান্তই অনুমান হচ্ছে যে তারা যেন হাহাকার কন্ঠে  আত্মচিৎকার করে  বলছে, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি, আমি পথশিশু বলছি’।  তারাই যেন দেশের সব চাইতে অসহায় প্রাণী, যাদের দেখার মতো কেউ নেই।

সরকারের সুবিশাল বাজেটে পথশিশু পুনর্বাসন কার্যকম রয়েছে। এর যথোপযুক্ত বণ্টন ও সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সমস্যা অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব। তাদের একটি স্থায়ী সমাধানও অত্যান্ত জরুরি। তাই আসুন, সরকারের পাশাপাশি আমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে এসব শিশুদের আত্মচিৎকারে সাড়া দিয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়াই।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়