‘স্মৃতির পাতায় আমার ক্যাম্পাস’
সজীব বণিক || রাইজিংবিডি.কম
আমার বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে কিছু আবেগ, আর অনেকখানি ভালোবাসার নাম। এইতো ২৮ মে ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) দিবস। ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে এটি। ১৪ বছর পেরিয়ে এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৫ বছরে পদার্পণ করেছে।
তবে, দেশব্যাপী চলমান করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হয়নি এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা
৬০ এর দশক থেকে কুমিল্লাবাসীর দাবি ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার। সে প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে কুমিল্লায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ পায়। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে কুমিল্লায় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু পরে ২০০৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কুমিল্লায় এক জনসভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর ২০০৬ সালের ২৮ মে ২৬তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এর ঠিক এক বছর পরে ২০০৭ সালের ২৮ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্বের প্রাচীন শালবন বিহারের কোল ঘেঁষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অবস্থান। ছোট-বড় পাহাড়ে ঘেরা লালমাটির ক্যাম্পাস এ বিশ্ববিদ্যালয়। স্বল্প পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হলেও প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। ৮টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে বেরিয়ে পড়েছেন দেশ ও দেশের মানুষের সেবায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো
প্রতিষ্ঠাকালে ৫০ একর জমির উপর ৩০০ জন শিক্ষার্থী আর ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু হয় পাহাড় আর সমতলের এ বিদ্যাপীঠ। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে মোট ১৯টি বিভাগে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। অধ্যয়ন করছেন প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করছেন ২৫৩ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে চারটি আবাসিক হল। এছাড়াও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ডরমেটরির দুটি ভবন। তাছাড়া একটি ছাত্রী হল এবং শিক্ষকদের জন্য একটি ডরমেটরি ও একটি গেস্টহাউজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংগঠন
ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা, মুক্তমঞ্চ, বৈশাখী চত্বর, শহীদ মিনার, সানসেট ভ্যালি, বাবুই চত্বর ও লালন চত্বর ক্যাম্পাসের উল্লেখযোগ্য স্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। ডিবেটিং ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব, বিএনসিসি, সাংবাদিক সমিতি, থিয়েটার, প্রতিবর্তন, প্ল্যাটফর্ম, আইটি সোসাইটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছর ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যা দিয়ে নতুন ভূমি অধিগ্রহণে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ ও শিক্ষার্থীদের শতভাগ অবকাঠামো নিশ্চিত এবং শিক্ষা উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুবিধা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস সংকটের পর পরিবহন সুবিধায় অনেক পিছিয়ে শিক্ষার্থীরা। ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে পরিবহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৫টি নীল বাস। অন্যদিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপাচার্যের কথা
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এ পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৬ জন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি।
তিনি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বলেছেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে চলমান করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হলো না বিশ্ববিদ্যালয়টির এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য বছরের প্রথমেই একটা পরিকল্পনা নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে আমাদের সবারই তো হাত-পা বাঁধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যবৃন্দদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানোর পরিকল্পনাও আমরা নিয়েছিলাম। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আগামীতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিবসটি উদযাপন করবো।’
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
কুবি/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন