ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনা পরবর্তী পৃথিবী কেমন চান তারা?

মোহাম্মদ শাহীন আলম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনা পরবর্তী পৃথিবী কেমন চান তারা?

একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় মহামারি কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস, যা পৃথিবীজুড়ে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বিশ্বে চলমান অর্থনীতির চাকা অচল করে নতুন এক পৃথিবী আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। করোনার প্রভাবে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে। কারণ বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং জ্বালানির চাহিদা অনেকটা সম্পর্কযুক্ত। অর্থনীতির উঠানামা জ্বালানি চাহিদার প্রভাবকস্বরূপ দেখা যায়।

মহমারির কারণে পৃথিবীজুড়ে এই অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে মধ্যেপ্রাচ্যের জ্বালানি নির্ভরশীল দেশগুলোর বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে। কিন্তু কেউ কখনো ভেবেছে! যেই তেল নিয়ে এত যুদ্ধ, অস্ত্রের ঝনঝনানিতে মরুভূমি কেঁপে উঠত প্রায়শই, সেই তেল আজ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় বিনে পয়সায়।

তবে বিস্ময় দেখা দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সবচেয়ে উন্নত দেশের খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসকে সামাল দিতে পারিনি। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন লাখের ঘর। তাহলে অন্যান্য দেশতো দূরের কথা। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে এমন ভাইরাস পৃথিবীর কোনো মানুষ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। তবুও পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানীরা। ভ্যাকসিনের জন্য প্রহর গুনছে বিশ্ববাসী। যদিও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সফলতা পায়নি কোনো সংস্থা। তবে কি মানব সমাজ নতুনরূপে আবির্ভূত হচ্ছে? সত্যিকারার্থে বিশ্বায়ন কেমন হওয়া উচিত? করোনা উত্তর বিশ্বে মানবতা বিবেচ্য হবে নাকি সম্পদ? স্বাস্থ্যব্যবস্থা নাকি অস্ত্রাগার? উত্তর খুঁজলে মিশ্রিত মনোভাব সামনে দাঁড়ায়। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন, সেই ভাবনাগুলো লিখে পাঠিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহীন আলম।

আবু নাঈম

নাঈম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, টাকা আর ক্ষমতার মোহে আমরা যাই করি না কেন, সততার চেয়ে বড় কিছুই নেই। এ বিশ্বমহামারি আমাদের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। তাই আমি একটি মানবিক সুন্দর  সমাজের স্বপ্ন দেখি। একটা সুন্দর দেশ, একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য আমরা এই লড়াইটা চালিয়ে যাব। আর এই লড়াইয়ে আমাদের মূল শক্তি হবে একতা। আর এ লড়াইয়ে আমাদের গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। আমাদের সবাইকে মিলে দেশটা এগিয়ে নিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, সম্মিলিতভাবে আমরা যদি কাজ করি, তাহলে দেশ আগাবে।

মুনাওয়ার রিয়াজ মুন্না

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুন্না। তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে একটি সুন্দর ও সুস্থ পৃথিবীর প্রত্যাশা করছি। করোনার ভয়াবহতা শেষে এ মহামারিতে আক্রান্ত এবং তা প্রতিরোধকল্পে গৃহে অবস্থানকারীদের দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে করোনায় মুখ থুবড়ে পড়া শিক্ষাব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন, আক্রান্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পুনর্বাসন ও দীর্ঘ এ সময়ে তাদের শিক্ষা বিরতির ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে হবে।

কয়েক লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন স্থবির হয়ে আছে। এদের ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য শ্রেণির পাঠ কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে। যেসব দরিদ্র শিক্ষার্থী তাদের টিউশন বা চাকরির টাকায় পরিবার চালাতো তাদেরকে এককালীন বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। করোনায় বিপর্যস্ত দেশের কৃষি ও শিল্পকে নবোদ্যমে বিকশিত করতে হবে। সর্বোপরি নৈতিকতা ও মানবিক বোধে দীক্ষিত হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হবে।

মুরতুজা হাসান নাহিদ

নাহিদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে লোভ-লালসা মুক্ত মানুষের প্রত্যাশা করি। অতীতের প্রতিটি মহামারি পৃথিবীকে নতুনরূপে নতুন কিছু শিখিয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব আজ স্থবির হয়ে গেছে, আর এই স্থবির বিশ্ব মানবজাতিকে কিছু শিক্ষা দিয়েছে। যেমন, আমাদের পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি। আর আমরা কেউ জানি না কবে এ করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পাব!

তবে, আমার ধারণা পৃথিবী একদিন তার নিজস্বরূপে ফিরবে ইনশাআল্লাহ। করোনা পরবর্তী পৃথিবী হোক প্রতিটি মানুষের ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির মেলবন্ধন। আর এই মহামারি থেকে আমরা সবাই যেন একটি শিক্ষা গ্রহণ করি, সেটি হচ্ছে আমাদের প্রতিটি মানুষের লোভ-লালসা সংবরণ হোক।

শরীফুল ইসলাম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন নেতিবাচক ও সামাজিক মর্যাদার পরিবর্তনের প্রভাব ফেলছে। এই মহামারির ফলে বিশ্ব যেভাবে বদলে যেতে পারে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্টনায়করা আজ চিন্তিত। মানুষের ব্যবহারিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবন ধারণের সঠিক পথটি বেছে নিতে হবে।

করোনা পরবর্তী পৃথিবী কেমন হবে সেইটা নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে বলা অনিশ্চিত। তবে পৃথিবীর সবকিছু আগের মতো আবার সচল হয়ে উঠুক সেইটা আমার প্রত্যাশা। সবকিছুর থমকে উঠার নিশ্চুপ আওয়াজকে ভেঙে পৃথিবী আবার গর্জে উঠুক নতুন শক্তি নিয়ে। আবারও জনাকীর্ণ হোক নিউইয়র্ক, সাংহাই, টোকিও, মেলবোর্ন, ঢাকার মতো বিখ্যাত শহরগুলো। মানুষের প্রতিধ্বনিতে মুখোরিত হোক সেই আগের টাইম স্কয়ার।

আমি চাই, আবারও বিমান ডানা মেলে আকাশে উড়ুক। আবার কলকাতা, চট্রগ্রাম, আলেকজান্দ্রিয়া, আমস্টারডাম ও সিডনি বন্দর কন্টেইনার এবং জাহাজের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠুক। একটি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর নতুন পৃথিবীর অপেক্ষায়।


কুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়