ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে মানুষ’

ইমানুল সোহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ৪ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে মানুষ’

ববিন আলী। নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। চার মাস যাবৎ সেখানেই রয়ে গেছেন। কথা ছিল গ্রামে থাকা পরিবারের সাথে সদ্য গত হওয়া ঈদ আনন্দে শামিল হবেন। গ্রামে থাকা আদরের সন্তানের জন্য ঈদের জামা নিয়ে আসবেন। সেই স্বপ্ন ম্লান করে দিয়েছে অদৃশ্য করোনাভাইরাস।

কারণ, নিজের পরিবার আর গ্রামবাসীর কথা চিন্তা করে গ্রামে আসা হয়নি তার। ঈদ আনন্দ করেছেন কর্মস্থলের বদ্ধ ঘরে। ঈদের ছুটি শেষে আবারও ফিরেছেন কর্মস্থলে। পরিবার ছেড়ে থাকার কষ্ট আর করোনাভীতি নিয়েই চলছে জীবিকা অর্জন। মন চাইলেও ফিরতে পারছেন না গ্রামের বাড়িতে। এমন হাজারো কারখানার শ্রমিক করোনাভাইরাসে মনোযুদ্ধ করে শহুরে রয়ে গেছেন।

শ্রমিক থেকে আসা যাক ডাক্তার-নার্সদের দিকে। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পিছুটান থাকলেও যাদের পেছনে ফেরার সময় নেই। ড. বাপ্পী হাসান। বাসায় ৫ বছর বয়সী সন্তান। এছাড়াও পরিবারে বাবা-মা ও বোন রয়েছে। সকাল হলেই যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কর্মস্থলে যাওয়ার পূর্বক্ষণে বাঁধা দেয় মা। আর ড. বাপ্পীর চোখে ভেসে ওঠে সন্তানের প্রিয়মুখ। তবুও সব মায়াকে পাশ কাটিয়ে যেতে হয় কর্মস্থলে। সারাদিন রোগীদের সঙ্গে সঙ্গ দিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন।

ঘরে ফিরে প্রিয় সন্তান কিংবা প্রিয়তমার থেকে থাকতে হয় দূরে। কষ্টে বুক ফাটলেও কোলে তুলে সন্তানকে আদর করতে পারেন না। এমন মনোশঙ্কায় দিন কাটছে ডাক্তারদের।

এছাড়াও অদৃশ্য ভাইরাস থেকে মানুষকে সচেতন করাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে প্রশাসন ও সাংবাদিকরা। সঠিক তথ্যের সন্ধানে সংবাদকর্মীরা ছুটছেন হাসপাতাল, বাজার কিংবা রাস্তায়। ঝুঁকি জানার পরেও তারা জনগণকে সচেতন করে যাচ্ছেন।

পেশাজীবীর বাইরে এসময় গ্রামাঞ্চলে মাঠে-ঘাটে কৃষকেরা ঘরে ধান তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অদৃশ্য করোনাভাইরাস সম্পর্কে জ্ঞাত হলেও জীবিকার তাগিদে তাড়াহুড়ো করে তারা ধান কাটছেন। তাদের কাছে জীবন ও জীবিকা যে একসূত্রে গাঁথা। সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাদের কাজেই থাকতে হয়। সেই মানুষগুলোও সন্ধ্যায় ঘরে ফেরে স্বাস্থ্য বুলেটিনে চোখ রাখে। আর অবচেতন মনেই দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত হয়।

সবশেষে আসা যাক দেশের তরুণদের দিকে। মহামারি করোনায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে বাসায় বন্দি শিক্ষার্থীরা। কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আড্ডা থেকে বিরত তারা। যে তারুণ্য মাঠ- ঘাট দাপিয়ে বেড়ায়। সেই তারুণ্য আজ ঘরবন্দি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের উৎফুল্ল রাখতে চেষ্ঠা করলেও তা মনোপুত হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতেও তরুণরা অসহায়দের পাশে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

এই করোনার সময়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে, কবিতার লাইনটি যেন নিষ্ফল। তরুণরা চাইলেও বিশ্ব কিংবা দেশকে ঘুরে দেখতে পারছে না। তাই অদৃশ্য ভাইরাসকে মেনে নিয়ে তরুণরা মনোযুদ্ধ করে আজ গৃহবন্দি।

এভাবে বিশ্বের সব মানুষ এখন মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে নিমজ্জিত। তবে, অচিরেই এই মরণঘাতী ভাইরাস থেকে মানবকুল রক্ষা পাবে, এই প্রত্যাশা সবার।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়