ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘রক্ষা করব পরিবেশ, গড়ব সোনার বাংলাদেশ’

শাহরিয়ার বেলাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৪, ৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘রক্ষা করব পরিবেশ, গড়ব সোনার বাংলাদেশ’

বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ জরুরি হয়ে উঠেছে। আমরা বুঝে বা না বুঝেই প্রতিনিয়ত প্রকৃতির ক্ষতি করছি। বন কেটে আবাস গড়ছি, জলাভূমি ভরাট, জ্বালানিশক্তির অপচয়, নদী ও বায়ুদূষণ করছি। এভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে নিজেদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলছি। এসব ক্ষেত্রে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।

বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষার কারণ হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি মানুষ এবং মানুষের ভোগ। পৃথিবীতে এমন কোনো সমস্যা নেই, যার সঙ্গে এই ক্রমবর্ধমান মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। গত ৫০ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৩২০ কোটি থেকে ৭২০ কোটি (আনুমানিক) হয়েছে।

২০০৮ সালের হিসাবে সমগ্র পৃথিবীতে জল ও স্থল মিলিয়ে মোট উৎপাদনশীল ভূমির পরিমাণ ছিল ১২ বিলিয়ন হেক্টর। আর ওই সময়ে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল ৬৭০ কোটি, যার অর্থ হচ্ছে সে সময়ে আমাদের মাথাপিছু উৎপাদনশীল ভূমির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৮ হেক্টর করে, এই পরিমাপকে গ্লোবাল হেক্টর বলা হয়।

আমরা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষের কী করণীয়, সেটি গভীরভাবে ভাবতে হবে।

সমগ্র বিশ্ব পরিবেশের ধারণাকে একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে- সেটি হলো টেকসই উন্নয়ন। ১৯৮৭ সালের সবার ভবিষ্যৎ ও টেকসই উন্নয়নের ধারণায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশের তিনটি বিষয় ছিল। পরিবেশ নিয়ে বিশ্ব অনেক সচেতন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে আলোচনা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিবেশ আজ বিপর্যয়ের মুখে। বাইরে বের হলেই ডাস্টবিন থেকে বিভিন্ন বস্তুর দুর্গন্ধে নাক -মুখ বন্ধ রাখতে হয়। সারাক্ষণ শরীরে ধুলাবালি উড়ে আসতে থাকে। আজ বুড়িগঙ্গার পানি সম্পূর্ণ অনুপযোগী।

এসব দূষণ আমরাই তো করছি। আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই, তাহলে পরিবেশ কখনোই রক্ষা করতে পারব না। কিছু দেশ পরিবেশ ধ্বংস করে মুনাফা করছে, আবার পরিবেশ রক্ষার নামে প্রযুক্তি বিক্রি করে মুনাফা করছে। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাকরিমুখী। বিষয় হিসেবে পরিবেশ কম গুরুত্ব পায়। এসব কারণে পরিবেশ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

পরিবেশ নিয়ে বহুমুখী আলোচনা হচ্ছে। অনেকে ভাবেন বন, বন্য প্রাণী, জলাভূমি এগুলো থাকলেই কি বা না থাকলেই কি। আমাদের ভালো নীতি আইন আছে, কিন্তু কেন যেন এগুলোর প্রয়োগ দেখি না। কোথায় যেন ঘাটতি রয়েছে। পরিবেশের উপাদানগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বনে কেবল বৃক্ষ নয়, বৃক্ষের সঙ্গে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র উদ্ভিদ থেকে শুরু করে বৃহৎ বন্যপ্রাণীসহ সবকিছুর একটি নিবির সম্পর্ক রয়েছে। উদ্ভিদের সঙ্গে উদ্ভিদ ও প্রাণী, আবার প্রাণীর সঙ্গে প্রাণী ও উদ্ভিদের সম্পর্ক রয়েছে। এদের কোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমগ্র পরিবেশে তার প্রভাব পড়বে।

আজ জলাভূমির দিকে তাকাই, জলাভূমিগুলো দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে। জলাভূমিতে কেবল মাছ নয়, মাছ ছাড়াও অনেক উপাদান আছে। জলাভূমির জীববৈচিত্র্য যদি বিনষ্ট হয়, তাহলে পরিবেশের কত বড় ক্ষতি হবে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না।

নদী দিয়ে কেবল পানি প্রবাহিত হয় না, নদীর মধ্যেও একটি জীববৈচিত্র্য রয়েছে। সামগ্রিকভাবে নদীর সব সম্পদ মানবকল্যাণে আসছে। কিন্তু আজ সেই নদীর কী অবস্থা, সেটা সবাই জানি।

আজ ঢাকা শহরের সবুজ একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। নগর পরিকল্পনার সময়ও সবুজ ধরে রাখার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। শহরের আশেপাশের নদীগুলো ধ্বংস হচ্ছে, নদীগুলো দখল হচ্ছে। শিল্পবর্জ্যে দূষিত হচ্ছে।

নীতিনির্ধারক, প্রশাসক, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এদের সবার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এই সমন্বহীনতার জন্য তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনায় জনগণের সম্পৃক্ততা রাখতে হবে।

চারপাশে যা আছে, তাই আমদের পরিবেশ। এই বোধ ধারণ করতে পারলে প্রতিদিন ঝাড়ুদারদের একগাদা পলিথিন সংগ্রহ করতে হতো না। আমাদের ব্যক্তিগত অভ্যাস পরিবর্তন প্রয়োজন। পৃথিবী যেভাবে চলছে, তাতে কিছুদিন পর মানুষও বিলীন হতে থাকবে। কারণ, জীববৈচিত্র্য সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে।

পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কেবল বন মন্ত্রণালয় নয়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে কাজ করতে হবে। জলাশয়গুলো রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে, নদীগুলোকে দূষনমুক্ত করতে হবে। মোট কথা প্রতিটি প্রকল্প অনুমোদনের সময় পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তবেই আমরা আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে পারবো।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়