ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অনলাইন ক্লাস: যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের কিছু সুপারিশ

এ টি এম মাহফুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৬ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অনলাইন ক্লাস: যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের কিছু সুপারিশ

বিশ্বব্যাপী এক আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। এর প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। সর্বত্র দেখা দিয়েছে হতাশা-আতঙ্ক। সামনে কি অপেক্ষা করছে সবই অনিশ্চিত। বিশ্বের অনেক শহর পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরীতে। আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে ঘরে। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। এরই মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বিভিন্ন দেশ অনলাইন কার্যক্রম চালু করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও সীমিত আকারে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। অনলাইন ক্লাস নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরছেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থী এ টি এম মাহফুজ।

আনিকা তাসনিম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি থমকে আছে এখন। অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস পরিচালনা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করতে সাহায্য করবে। বর্তমানে সবচেয়ে বড় শঙ্কা সেশন জট। যদি অনলাইনে ক্লাস শুরু হয় তবে এই সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। এটা ঠিক। কিন্তু এরপরও আমি এটার পক্ষপাতী নই। কারন শতভাগ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা নাই। ইন্টারনেট ডাটা কেনাও ব্যয়বহুল। যেটা সবার পক্ষে সম্ভব না। এছাড়া নেটওয়ার্ক সব সময় সব জায়গায় ভালো কাজ করে না। আমাদের পড়াশোনা বেশিরভাগই ল্যাবভিত্তিক। তাই অনলাইন ক্লাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ণ করাও সম্ভব নয় । এমন অবস্থায় যা করা যায়-

১. মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করতে পারে সরকার।

২. ক্লাসগুলার ভিডিও রেকর্ড করতে হবে। ক্লাসের বিভিন্ন সাপোর্টিভ ডকুমেন্ট পিডিএফ করে শিক্ষার্থীদের কাছে দেয়া যেতে পারে। যারা সরাসরি ক্লাস করতে পারছেন না তারা এসব ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন। শিক্ষার্থীদের যদি সমান সুবিধা দেয়া যায় তখন অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস অবশ্যই সময়পোযোগী একটি সিদ্ধান্ত হবে।

আহাদ হোসাইন, গণিত বিভাগ

অনলাইন ক্লাসের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন ভালো ডেটা কানেকশন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে আসেন। লকডাউনে তারা গ্রামেই অবস্থান করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেটা কানেকশন খুব খারাপ থাকে। তাই তাদের পক্ষে অনলাইনে ক্লাস করাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম আমাদের যথাযথ শিক্ষাটা দিতে পারে না। তাই আমি মনে করি অনলাইনে ক্লাস না হওয়াই ভালো।

কানিজ ফাতিমা, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ

অনলাইন ক্লাস নির্দ্বিধায় একটি ভালো উদ্যোগ। যার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। কিন্তু এই উদ্দেশ্য তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন সকল শিক্ষার্থী সমানভাবে সুবিধাটা নিতে পারবেন। তাই অনলাইন ক্লাস বাস্তবায়নের পূর্বে সকল শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সংযোগ ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মুনতাছির রহমান, ইইই বিভাগ

সত্যি বলতে অনলাইন ক্লাস করে ভালো কিছু সম্ভব হবে বলে মনে হয়না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নসহ নানান সমস্যা অনলাইনে সমাধান করা যায় না।

তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনলাইন ক্লাস হলো মন্দের ভালো।

আমরীন ইসলাম অতশী, ইংরেজি বিভাগ

আমার মনে হয় বাংলাদেশে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করার মতো উপযোগী প্লাটফর্ম নেই। কারণ পাবলিক ভার্সিটির বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত। অনেকে নিম্নবিত্ত। সবার পক্ষে অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব না। অনেকের বাসা আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেখানে ঠিকঠাক নেট পাওয়া যায় না। অনেকের হয়তো স্মার্টফোন নেই। এতে যা হবে তা হলো যারা ক্লাস করতে পারবে তারা এগিয়ে যাবে। বাকিরা পিছিয়ে পড়বে।

নাঈম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

সম্প্রতি অনলাইন ক্লাসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইন ক্লাস করতে প্রথমত প্রয়োজন ভালো ইন্টারনেট স্পিড। অনলাইনে প্রবেশের জন্য আমাকে বাড়ির বাইরে যেতে হয়। দেশের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা পরিবর্তন করা উচিত। দ্বিতীয়ত অনলাইনে ক্লাস করার মতো ডিভাইস ও ডেটা কেনার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। আমার অনেক সহপাঠীরই সে সক্ষমতা নেই। সুতরাং এসকল সমস্যা দূর করতে পারলেই অনলাইন ক্লাসটা সবার জন্য ভালো হবে।

আবির হোসেন, ইংরেজি বিভাগ

অনলাইনে যে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ভালো সিদ্ধান্ত। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। অনলাইনে ক্লাস করতে গেলে উচ্চগতিসম্পন্ন নেটওয়ার্ক, ল্যাপটপ, ভালো মোবাইল ফোন প্রয়োজন। চড়া মূল্যের ইন্টারনেটের পাশাপাশি দুর্বল গতি তো রয়েছেই। আর অধিকাংশ শিক্ষর্থী নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত হওয়ায় তারা এই খরচ বহন করতে পারবেন না। যদি কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্তে অটুট থাকে, তাহলে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ।

আবির আল সাবাহ, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ

এভাবে পরবর্তী ৩/৪ মাস যদি বন্ধ থাকে, তাহলে অবশ্যই অনলাইন ক্লাস চালু করা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বাড়ি গ্রামে। গ্রামের ইন্টারনেট সেবা নাজুক। এসব বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।

রনি আকতার, এপিপিটি বিভাগ

বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এখনও অনলাইন ক্লাসের উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করি। আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থী আছে যাদের কোনোভাবে স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য থাকলেও সবাই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন না। নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও সবার ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার সামর্থ্য নেই। যদি অনলাইন ক্লাস ছাড়া কোনো বিকল্প পথ না থাকে সেক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ নিশ্চিত করতে হবে। সমান সুযোগ দিতে হবে যাতে সবাই ক্লাসে অংশ নিতে পারে। তাছাড়া বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমাদের কোর্সের বড় একটা অংশ ল্যাবরেটরির সঙ্গে যুক্ত। অনলাইনে কোনভাবেই ব্যবহারিক জ্ঞান লাভের সুযোগ নেই। অনলাইনে পুরোটা শেখা কোনোভাবেই সম্ভব না। তবুও মন্দের ভালো হতে দোস কি?

কাইসার জাহান মাসউদ, ইইই বিভাগ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসেন। এদের একদিকে যেমন অনলাইন ক্লাস করার মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নেই আবার ইন্টারনেট সেবাও পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় অনলাইন ক্লাস শুরু করলে একটা বড় বৈষম্য দেখা দেবে। যাদের দামি ফোন বা ল্যাপটপ আছে এবং শহর এলাকায় থাকেন তারাই শুধু এই সুবিধা পাবেন। অন্যরা পাবেন না। এর দায়টা কে নেবে...?

নাইমুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

শহর কিংবা মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস নির্দ্বিধায় ফলপ্রসু হলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্রামের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এই কার্যক্রম থেকে সঠিকভাবে উপকৃত হবেন কিনা সেটা অনিশ্চিত। শিক্ষা অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব তা সকল নাগরিকের কাছে বিনামুল্যে পৌঁছে দেওয়া। তবে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কাছে আমার অনুরোধ, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেনো তা যেন দেশের বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীদের ভেতর 'ই-ডিভাইড' সৃষ্টি না করে।


যবিপ্রবি/মাহফুজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়