ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আগে নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন’

শাহরিয়ার বেলাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৭ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘আগে নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন’

বাংলাদেশে যেসব সামাজিক সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি আজ এক শ্রেণীর মানুষের কাছে প্রধান নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতির কালো থাবা বিস্তার লাভ করেছে। দুর্নীতির কারণে জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অগ্রগতির চাকা পশ্চাৎমুখী হচ্ছে। আমাদের এই সামাজিক ব্যাধি সরাতে হবে। আগে নিজেকে, তারপর দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে।

লজ্জার বিষয় হচ্ছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জরিপে পরপর পাঁচবার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে ছিল আমাদের প্রিয় দেশ। আজকাল দুর্নীতির বিস্তার দেখা যায় সর্বস্তরে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেমালুম হজম করে ফেলা, সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করা, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস চুরি, আয়কর ফাঁকি, চাকরির নামে হায় হায় কোম্পানি খোলা, কালোবাজারি, প্রকৃত অপরাধের অভিযোগে থানায় মামলা না নেওয়া, কোথায় নেই দুর্নীতি? এমনকি দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত চাল, ডাল গম এসবের মাঝেও দুর্নীতি হচ্ছে।

উন্নয়নের নামে টেন্ডারবাজি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরিতে নিয়োগ, যোগাযোগেও দুর্নীতি হচ্ছে। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে মানুষ দিশেহারা। মূল্যবোধ ও ন্যায়নীতির প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। যে দেশের মানুষ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, সে দেশের মানুষ কখনই দুর্নীতির কাছে পরাজিত হতে পারে না। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রশাসন, সবকিছুকেই কলুষিত করেছে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি।

আমাদের দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। সাধারণ মানুষের শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্য দুর্নীতির কারণে ম্লান হয়ে যায়। জনগণের দুঃখ ও দারিদ্র্য বিমোচন তো দূরের কথা, ক্রমেই বেড়ে চলেছে ভূমিহীন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। সম্প্রতি বিভিন্ন সংস্থা ও দাতাদেশ দুর্নীতিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দুর্নীতির কারণেই মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে। আমাদের এমন চিন্তাধারা জাগ্রত করতে হবে যে, অনেক সংগ্রাম ও অজস্র ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশকে এভাবে পতনের মুখে ঠেলে দিতে পারি না।

রাজনীতি, অর্থনীতি যেহেতু একটি দেশের প্রধান নিয়ামক, তাই সুনীতির প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে প্রতিরোধ করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে মজবুত করতে হবে। দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, কর্মচারী এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের চিহ্নিত করে তাদের ক্ষমতাচ্যুৎ করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও জনদরদী নেতা নির্বাচন করতে হবে।

দুর্নীতি দমনে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এ কাজে সৎ, নির্লোভ ও দেশপ্রেমিক লোকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সর্বোপরি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। গণমাধ্যম, এনজিও,  সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দেশ হিসেবে আমরা যখন দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছি, তখন আমাদের প্রতিকার ও প্রতিরোধ দুটির ক্ষেত্রেই সমান গুরুত্ব দিয়ে এগোনো উচিৎ। নিজেরা শপথ নেবো এবং অন্যদের দুর্নীতি থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করবো। তবেই আমরা আমাদের দেশকে দুর্নীতির ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে পারবো।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়