ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সাদা মনের উপাচার্য ও ইবির উন্নয়ন

ড. হাবিবুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৮ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সাদা মনের উপাচার্য ও ইবির উন্নয়ন

দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিমি দক্ষিণে এবং ঝিনাইদহ শহর থেকে ২২ কিমি উওরে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের পাশে ১৭৩ একরের এই ক্যাম্পাস ছিল নানা সমস্যায় জর্জরিত। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. হারুন- উর- রশিদ আসকারীকে ১২তম উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ দেন।

তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ইংরেজী বিভাগের তিনবারের সভাপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রফেসর আসকারী দায়িত্বগ্রহনের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সফলতা অর্জন করেন।

অবকাঠাকামোগত উন্নয়ন

আসকারী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্বের প্রশাসনের সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পে বরাদ্দকৃত (কিন্তু অব্যবহৃত) ৭১ কোটি টাকার প্রোজেক্ট স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেন যা সরকারের implementation monitoring and evaluation division এর মাধ্যমে দেশের অনুকরণীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। ফলে ৩য় পর্যায়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মেগাপ্রকল্পের আওতায় ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং একাডেমিক উন্নয়নের জন্য ৫৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় যেখানে ১১টি ভবনের ভার্টিকেল বর্ধিতকরণ ও ৯টি দশ তলা বিল্ডিং রয়েছে যেমন (১) ১০ তলা একাডেমিক ভবন (২) ১০ তলা ছাত্র হল নং ১ (৩) ১০ তলা ছাত্র হল নং ২ (৪) ১০ তলা ছাত্রী হল নং ১ (৫) ১০ তলা ছাত্রী হল নং ২ (৬) ১০ তলা শেখ রাসেল হলের বি ব্লক-১ (৭) ১০ তলা প্রসাসন ভবন (৮) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণ (৯) ব্যবসায় প্রশাসন ভবনের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণ (১০) রবীন্দ্র-নজরুল একাডেমিক ভবনের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারন (১১) মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণ (১২) ১০ তলা শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টার (১৩) ১০ তলা কর্মচারী কোয়ার্টার (১৪) ডরমিটরী ভবন (১৫) ইবি ল্যাব স্কুল (১৬) বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনাতায়নের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণ (১৭) ১০ তলা শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টার ২ এর ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণ (১৮) মেডিকেল সেন্টার ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণ।

প্রফেসর আসকারীর সময়ে অধিক স্বচ্ছতার মাধ্যমে ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি চালু হয়। ইতোমধ্যে নানাবিধ বাধা উপেক্ষা করে সম্পূর্ন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ১৮টি ভবনের ভার্টিকেল বর্ধিতকরণের নির্মানকাজ চলছে। এছাড়া ৯টি দশ তলা ভবনের ডিজাইন শেষে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে আরও ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে যাদের সবগুলোর অর্থ মিলে এই প্রকল্পের অর্ধেকও হবে না। এছাড়াও বর্তমান প্রশাসনের সময় পুরো ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামরা স্থাপন করা হয়েছে।

একাডেমিক উন্নয়ন

প্রফেসর আসকারী দায়িত্ব নেওয়ার পর একাডেমিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। অনেকের বাধা সত্ত্বেও অফিস সময় ৮.০০ টা ২.০০ টার পরিবর্তে ৯.০০ থেকে ৪.৩০ পর্যন্ত করা হয়। বর্তমান প্রশাসনের সময়ে ৫ বছর (২০১৬-২০২১) মেয়াদী মডেল অর্গানোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত হয়। পূর্ববর্তী ৫টি অনুষদকে ৮টিতে বর্ধিতকরণ করা হয়। ৯ টি নতুন বিভাগ চালু করে ৩৪টি করা হয়। বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি, এমফিল-পিএইচডি নীতিমালা আন্তর্জাতিকীকরণ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী অটোমেশন, রেজাল্ট প্রোসেসিং সফটওয়ার সংযুক্ত, কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরী ও ইনোভেশন ল্যাব স্থাপন করা হয়। ফেসবুক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেখে বর্তমান প্রশাসন দীর্ঘ ১৬ বছর পর ৪র্থ সমাবর্তন-২০১৮ আয়োজন সম্পন্ন করেন যা এ যাবত কালের সবচেয়ে বৃহৎ সমাবর্তন।

বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেশনজট নিরসনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। সেশনজটের অনেকগুলো কারণ ছিল। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কারণে অনির্ধারিত ছুটি। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় একদিনও অযাচিতভাবে বন্ধ থাকেনি। তাছাড়া বর্তমানে শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার এবং সংগঠনের সহযোগিতার কারণে সেশনজট প্রায় শুণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। একাডেমিক রুটিনগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। ২২ বিভাগে সেলফ অ্যাসেসমেন্টসহ কারিকুলাম পরিবর্তন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ানো হলেও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি দেওয়া হতো না। প্রফেসর আসকারী দায়িত্ব নেওয়ার পর পাঁচটি বিভাগ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালুর মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অফিস সময় বাড়ানোর কারনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ক্যাম্পাসের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য প্রশাসন সবুজ ও বর্ণিল ক্যাম্পাস তৈরিতে গুরুত্ব আরোপ করেছে। ক্যাম্পাসের লেক পরিষ্কার করে নয়নাভিরাম লেক করা হয়েছে। বোটানিকাল গার্ডেন করা হয়েছে। পানির ফোয়াড়া করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খাবারের মান বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এছাড়াও ক্যাম্পাসে থেকে শিক্ষার্থীদের নানা সংকট নিরসনের জন্য শিক্ষকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের গেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের ডরমেটরি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের সন্তানেরা ক্যাম্পাসে থেকে যাতে কোয়ালিটি এডুকেশন পায়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী স্কুলকে যুগোপযোগী করার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এবং শিক্ষকদেরকে ক্যাম্পাসমুখী করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের নিচে সুবিশাল জায়গাজুড়ে একটি শপিং কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে টাউনশিপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিকীকরণে সাফল্য

আন্তর্জাতিকীকরণে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্বগ্রহন করা প্রফেসর আসকারী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এমওইউ সম্পন্ন করেছেন। খেলাধুলায় দেশি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিকীকরণের শর্ত পূরনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকা বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি পুরনায় চালু করা হয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ৪০ জন বিদেশী শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমান শিক্ষাবর্ষেও বেশ কিছু বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের আমলে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু বিদেশি শিক্ষার্থী ডিগ্রীও অর্জন করে দেশে ফিরে গেছে। বর্তমানে শত শত বিদেশী শিক্ষার্থী নতুন করে ভর্তির জন্য আবেদন করছেন।

প্রফেসর আসকারী প্রশাসন তাদের যোগ্যতা বিচার করে পরবর্তীতে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। গত বছর দেশে প্রথমবারের মতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আন্তর্জাতিক জোট- আইসিএসডি এপি’র সামাজিক উন্নয়ন সম্মেলন-২০১৯। উক্ত সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন এশিয়া, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার ৮ দেশের ৪৮ বিদেশী বিশেষজ্ঞসহ ২৬৭ জন। প্রফেসর আসকারীর প্রচেষ্টায় তুরষ্কের ইরাসমাস ইন্সটিটিউশনের মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়িন ভুক্ত বিশ্ববিদ্যাগুলোর সাথে মোবিলিটি প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মোচন হয়েছে।

আর্থিক খাতে উন্নয়ন

বিগত প্রশাসনের আমলে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে  বাজেট ছিল ৮৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রফেসর আসকারীর প্রচেষ্টায় বাজেট বরাদ্দ বাড়তে থাকে এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ সালে ১৫৩ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা বাজেট বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং সংশোধিত বাজেটে ১১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অভ্যন্তরীণ আয় বিগত প্রশাসনের আমলে ২০১৫-২০১৬ ইং অর্থ বছরে ৮ কোটি টাকা মাত্র। বর্তমান প্রশাসনের আমলে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ১৯ কোটি টাকা আয় হয়েছে। বিগত প্রশাসনের আমলে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছর পর্যন্ত ৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বাজেট ঘাটতি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের আমলে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা , ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৩ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি হয়েছে এবং ২০১৯-২০চ২০ অর্থবছরে কোন বাজেট ঘাটতি হবে না বলে আশা করা যাচ্ছে।

বিগত প্রশাসন ১২৩ জন অনুমোদনবিহীন অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়েছেন যাদের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যেত না ফলে প্রতি বছর অনেক টাকা বাজেট ঘাটতি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসন ১২৩ জন জনবল মঞ্জুরী কমিশন থেকে অনুমোদন নিয়েছেন এবং অর্থ বরাদ্দও পাওয়া গিয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের অনুমোদনবিহীন থাকায় বিগত প্রশাসন এর জন্য অর্থ বরাদ্দ নিতে পারে নাই। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক টাকার ঘাটতি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসন চলতি ২০১৯-২০১২০ অর্থ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল হিসাবে অনুমোদন নিয়েছেন। অর্থ পাওয়া গিয়েছে। ২০১৫-২০১৬ ইং অর্থ বছর পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার আয়  থেকে বিগত প্রশাসন ২১% আয় করতেন।

বর্তমান প্রশাসন গত ২০১৭-২০১৮ শিক্ষা বছর থেকে মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির প্রাপ্ত অর্থ থেকে ৪০% বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করে আয় বৃদ্ধি করছেন। বিগত প্রশাসন আমলে সরকারি নিয়মে বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হয়নি। মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক সরকারি নিয়মে আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হচ্ছে ও বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফিস ও অন্যান্য ফিস বৃদ্ধি করে আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে যা বিগত প্রশাসনের আমলে সম্ভব হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক চর্চার উন্নয়ন

দীর্ঘকাল ধরে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রগতিশীল-অসম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। প্রধান ফটকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সুবিশাল ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার’, ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ ও ‘একুশে কর্ণার’, বঙ্গবন্ধু হল- এ শ্বাসত মুজিব ও মুক্তির আহবান ম্যূরাল স্থাপন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত করে প্রফেসর শামসুজ্জামান খান কে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার জন্য মাদক সন্ত্রাসমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার জন্য খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার প্রতি গুরুত্ব আরও বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়াও প্রতি বছর ক্যাম্পাসে বৈশাখী মেলা ও বইমেলার আয়োজনের প্রচলন শুরু হয়েছে। মাদক-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত দেশ গড়তে সাংস্কৃতিক ও সচেতনতা সৃষ্টিমূলক বিবিধ শিক্ষা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পরিবহন ও আবাসিক সমস্যার দুরীকরণ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৮০ অনুযায়ী এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এটি পরিপূর্ণ আবাসিক না হওয়ায় এবং কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিমি এবং ঝিনাইদহ থেকে ২২ কিমি দূরে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন ১ হাজার ২২৩ জন শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ১৪ হাজার ৪৫৪ জন শিক্ষার্থীকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে যাতায়াত করতে হয়। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ্রুপে পরিবহনের উপর নির্ভরশীল। এ সমস্যা সমাধানে থেকে নতুন একটি ডাবল ডেকার গাড়ি আনা হয়েছে। নতুন করে আরো ১৪টি গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে।

এছাড়াও চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জন্য আরো একটি ডাবল ডেকার গাড়ি ক্রয়ের জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। আগামী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য ২টি ডাবল ডেকার গাড়ি ক্রয়ের জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ  নেওয়া হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এর মধ্যে আবাসন সুবিধা আছে মাত্র ৩০০০ জনের। বর্তমানে ২২-২৫% শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে। চলমান ৫৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৮৫% আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পরিবহণ সঙ্কট দূরীকরণে ৩২ সিটের ৮টি এসি গাড়ী, ৫২ সিটের ২টি বাস ও ১টি অ্যাম্বুলেন্স পরিবহনপুলে যুক্ত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়ন

প্রফেসর আসকারী দায়িত্ব নেয়ার পর মেডিক্যালের ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেন্টারটি দোতলায় উন্নীত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারও যদি কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয় তাহলে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক রেফার করে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দিয়ে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী মেডিকেলের একজন স্বনামধন্য সাইকিয়াট্রিস্টকে দিয়ে আত্মহত্যাবিরোধী প্রোগ্রাম করা হয়েছে।

সততা, নিষ্ঠা এবং সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা প্রফেসর আসকারী তার প্রথম মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছেন আগামী ২০ আগস্ট। বর্তমান সরকারের ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ বস্তবায়নের একটি সহায়ক ক্ষেত্র হিসেবে প্রফেসর আশকারীর গৃহিত প্রথম মেগা প্রকল্প আগামী ২০২২ সালের মধ্য বাস্তবায়ন হলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে। প্রফেসর আসকারী ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় মেগা প্রকল্পের রুপরেখা ঘোষণা করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরো ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ। কৃষি ও হেলথ সায়েন্স অনুষদ গঠন। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নির্মাণ ইত্যাদি। এছাড়াও রিসার্চ সেল গঠন, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং সেল গঠন, সকল বিভাগে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলা, চাকুরী মেলার আয়োজন করা এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম সম্প্রসারণ প্রভৃতি তার রুপরেখায় রয়েছে।

লেখক: শিক্ষক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ইবি/মাহফুজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়