ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সেই কৃষক ছেলেটি বিসিএস ক্যাডার

মেহেরুজ্জামান সেফু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৮ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সেই কৃষক ছেলেটি বিসিএস ক্যাডার

তখন ১০ বছর বয়স। অধ্যয়ন করছিলেন পঞ্চম শ্রেণিতে। পড়াশোনায় ছিলেন বেশ মনোযোগী। ফসলের মাঠেও ছিলেন কৃষক বাবার সহযোগী। মাঠে ছেলেকে নিজের পাশে দেখে বাবা বলে উঠেছিলেন, জীবনে তোমাকে বড় হতে হবে।

শুরুটা সেখান থেকেই। তারপর দীর্ঘ ২০ বছর বাবার বলা কথাটাকে সঙ্গী করে বুনে গেলেন ৩৮তম বিসিএস ক্যাডার। হ্যাঁ বলছিলাম মাদারীপুর জেলার কালাকিনি উপজেলার বাশঁগাড়ী ইউনিয়নের অন্তর্গত পরিপত্তর গ্রামের মজিদ তালুকদারের ছেলে আজাহারুল ইসলামের কথা। শৈশবে বাবার বলা সেই কথাটি রেখেছেন আজাহারুল। মা-বাবার মুখে ফোটালেন হাসি, এতে ভীষণ খুশি পরিবারের ছোট ছেলেটি।

সাধারণভাবেই কেটেছে আজাহারুলের জীবন। বাবা কৃষি কাজ করেই সংসার চালাতেন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে আজাহারুল পঞ্চম। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবাকেও কৃষি কাজে সাহায্য করতেন। প্রবল আত্মবিশ্বাস আর অদম্য চেষ্টায় এগিয়ে গেছেন নিজের গন্তব্যে। হয়ে গেলেন ৩৮তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার (ইংরেজী)।

বিসিএস ক্যাডার হয়ে ওঠার গল্পটা জানতে চাইলে আজাহারুল বলেন, পরিবারই সফলতার মূল চাবিকাঠি। আমার মা-বাবার কারণেই আমি ক্যাডার হতে পেরেছি। প্রতিটা পদক্ষেপেই আমাকে ঢালের মতো আগলে রেখেছেন। আমার ভাই হেদায়েতুল ইসলাম সবসময় আমার যখন যা লাগত তা দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। আমার বোনেরা সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ভবিষ্যৎতে হতে চান দেশের মানুষের একজন আদর্শ সেবক। বেঁচে থাকতে চান দেশের মানুষের ভালোবাসা নিয়ে।

তিনি আরও বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পেছনে আসলে আমার কোনো জেদ নেই, ছিল অঢেল অনুপ্রেরণা, আমার বাবা-মাই ছিল আমার অনুপ্রেরণার সাগর। তাঁদের অনুপ্রেরণা না থাকলে আমার এ যাত্রা সফল হত না। এলাকার বড় ভাই হাসান জাহিদও খুব কাছে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

আসলে এটা ছিল আমার প্রথম বিসিএস, তাও ছিল ‘অ্যাপেয়ার্ড সার্টিফিকেট’ দিয়ে। আমি যখন বিসিএসে আবেদন করি তখনো আমার অনার্স শেষ হয়নি। এমতাবস্থায় আমার ডিপার্টমেন্টের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলীরা আমাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এবং সাহস যুগিয়েছেন।

এরপর আমার বন্ধু-বান্ধবীরা খুব কাছ থেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমি খুব সিরিয়াসলি পড়তাম বিসিএসের জন্য। যখন আমি প্রিলি পাস করলাম, তখন থেকেই আমার কিছু কিছু বন্ধু আমাকে ‘বিসিএস বন্ধু, মি. বিসিএস,  বিসিএস ভাই ইত্যাদি বলে দুষ্টুমি করত

ওদের দুষ্টুমিগুলো আমি একটু সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম আর মনে মনে সংকল্প নিয়ে পড়তে থাকলাম। অনেক সময় অনেক উপহাসেরও শিকার হয়েছি, কিন্তু সেটাও আমার জন্য আশীর্বাদই ছিল। আর সে কারণেই আল্লাহ্‌র রহমতে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।

ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনার পাশাপাশি সময় বের করে নিয়ে পড়তাম। আর আগে থেকে পড়তাম বলেই সাধারণ জ্ঞানের বিষয়টা রপ্ত করতে পেরেছিলাম। আর অন্যান্য বিষয়ে মৌলিক বিষয়গুলো আমার আয়ত্তে ছিল। তাই ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর যখন প্রিলি পরীক্ষা দেই তা খুব সহজেই উৎরে যাই এবং প্রিলি পাস করে যাই।

প্রিলির জন্য ভালো করে প্রিপারেশন নিতে গেলে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। আমারও তাই লেগেছিল। এরপর রিটেনের জন্য ৪/৫/৬ মাস সময় পাওয়া যাবে যেটাকে মনপ্রাণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। আমিও সেটাই করেছি।

এরপর রিটেনের রেজাল্ট হতে ৫/৬/৭ মাস লাগে সাধারণত। ঐ সময়টা আমি ভাইভার জন্য পড়েছি। ভাইভা শেষ হওয়ার দু-এক মাস পরেই ফাইনাল রেজাল্ট পাওয়া যায়।

মূল কথা, প্রিলির পূর্বেই আমার প্রস্তুতি ছিল দুই বছরের। আর পরের সময়টা খুব সতর্কতার সাথে সদ্ব্যবহার করেছি। আর তাই আমি এ যাত্রায় সফল।

আমি সাধারণত ৬-৭+ ঘণ্টা করে পড়তাম, তবে খুব মনোযোগ ও টেকনিক সহকারে পড়তাম। শুধু পেইজের পর পেইজ পড়লেই হবে না, সেটাকে তো মাথায় রাখতে হবে। আর নিয়মিত পড়তাম।

বিসিএস এমন একটা এক্সাম এখানে টিকতে হলে, হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল ও টেকনিক্যাল। ধরুন একটা প্রশ্ন আসলো পরীক্ষায়, সবাই ই উত্তর করলো কিন্তু যে উত্তরটাকে ডাটা-কোটেশন দিয়ে তথ্যবহুল করে লিখলো, সেই কিন্তু বেশি মার্কস পাবে।

আবার ধরেন, প্রিলিতে টিকতে হলে আপনাকে অবশ্যই টেকনিক্যাল হতে হবে, যেসব প্রশ্ন পরীক্ষায় আসার কোনো সম্ভাবনাই নেই, আপনি দিন-রাত কষ্ট করে সেসব প্রশ্ন পড়লেন কিন্তু পরীক্ষায় আসলো না, তাতে কি লাভ হলো! অবশ্যই সিলেবাস ও পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, তবেই আপনি সফল হবেন। আপনার বিচিত্রমুখী দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ৪-৫ লাখ পরীক্ষার্থীদের পেছনে ফেলে ক্যাডার হতে হবে। আপনাকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে ও দক্ষ হতে হবে।

আজাহারুল ইসলাম ২০০৮ সালে খাসেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০১০ সালে সরকারি নাজিমুদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, তিতুমীর কলেজ।

 

 

ঢাকা/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়